পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আর আমি জানি নে? যখন সায়েবের ঘরে জাত খোয়ালি সেই সঙ্গে একটা ব্যবস্থাও করে নে। ওর মা কি সোজা কান্না কেঁদেচে এই একটা বছর। তোর হাতের জল পজ্জন্তু কেউ খাবে না পাড়ায়, তুই অসুখ হয়ে পড়ে থাকলে এক ঘটি জল তোরে কেডা দেবে এগিয়ে? আপনি বিবেচনা করে দ্যাখো আমীনবাবু—নীলকুঠি তো হয়ে গেল অপর লোকের, সায়েব তো পটল তুললো, এখন তোর উপায়!

 প্রসন্ন চকত্তি বললে——জমিটুকু যাই করে দিইছিলাম, তবুও মাথা রক্ষে। নয়তো আজ দাড়াবার জায়গা থাকতো না। ও তো ভাগ দিয়ে পাচ বিঘে জমির ধান মোটে পাবে।

 ভগীরথের মা বললে—ভাগের ধান আদায় করাও হ্যাংগামা কম বাবু? সে ওর কাজ? ও সে মেমসায়েব কিনা? ফাঁকি দিয়ে নিলি ছেলেমানুষ তুই কি করবি শুনি?

 ভগীরথের মা চলে গেল। গয়ামেম প্রসন্ন চক্কত্তির দিকে তাকিয়ে বললে -খুড়োমশাই কি ঝগড়া করতি এলেন? বসবেন, না যাবেন?

 —না, ঝগড়া করবো কেন? মনডা বড় কেমন করে তোমাকে দেখে, তাই আসি-

 গয়ামেম সাবেক দিনের মত হাসতে লাগলো মুখে কাপড় দিয়ে। প্রসন্ন চক্কত্তি দেখলে ওর আগের সে চেহারা আর নেই - সে নিটোল সৌন্দর্য নেই, দুঃখে কষ্টে অন্যরকম হয়ে গিয়েছে যেন। তবুও জমিটা সে দিতে পেরেছিল নিজের হাতে মেপে, মস্ত বড় একটা কাজ হয়েছে। নইলে না খেয়ে মরতো আজ।

 প্রসন্ন চক্কত্তি বসলো গয়ার দেওয়া বেদে চেটায়ে অর্থাৎ খেজুর পাতার তৈরী চেটায়।

 —কি খাবেন?

 —সে আবার কি?

 —কেন খুড়োশাই, ছোট জাত বলে দিতি পারি নি খেতি? কলা আছে, পেঁপে আছে- কেটেও দেবো না। আপনি কেটে নেবেন। সকালবেলা আমার

৩০৬