—মাথার কাছে রেখে শুই। বাড়িতি কেউ নেই। মা থাকলি কথা ছিল না। ভূতপ্রেত অবদেবতার ভয় কেটে যায়। একা থাকি ঘরে।
—তা ঠিক।
—ইদিকি পাড়াসুদ্দু শত্তুর। কুঠির সায়েব বেঁচে থাকতি সবাই খোশামোদ করতো, এখন রাতবিরাতে ডাকলি কেউ আসবে না, তাই ঐ বইখানা দিয়েছেন বাবা, কাছে রেখে শুলি ভয়ভীত থাকবে না বলি দিয়েছেন। বড় ভাল লোক।...আজ ধান ভানতি না গেলি খাওয়া হবে না, চাল নেই। তাও কেউ ঢেঁকি দেয় না এ পাড়ায়। ওপাড়ায় কেনারাম সর্দারের বাড়ি যাব ধান ভানতি। তারা ভালো। জাতে বুনো বটে, কিন্তু তাদের মধ্যি মানুষেতা আছে খুড়োমশাই।
প্রসন্ন চকত্তি সেদিন উঠে এল একটু বেশি বেলায়। তার মনে বড় কষ্ট হয়েছে গয়াকে দেখে। একটা মাদার গাছতলায় বসলো খানিকক্ষণ গণেশপুরের মাঠে। গণেশপুর হোলো গয়ামেমদের গ্রামের নাম, শুধুই বাগদী আর ক’ঘর জেলে ছাড়া এ গ্রামে অন্য জাতের বাসিন্দা কেউ নেই। রোদ বড্ড চড়েচে। তবু বেশ ছায়া গাছটার তলায়।
প্রসন্ন ভাবলে বসে বসে-গয়া বড় বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে। আজ যদি আমার হাতে পয়সা থাকতো, তবে ওরে অমনধারা থাকতি দেতাম? যেদিকি চোখ যায় বেরোতাম দুজনে। সে সাহস আর করতি পারিনে, বয়েসও হয়েচে, ঘরে ভাত নেই।
গাছটায় মাদার পেকেচে নাকি?...
প্রসন্ন মুখ উঁচু করে তাকিয়ে দেখলে। না, পাকে নি।
বিকেলের দিকে ভবানী ভাগবত পাঠ করে উঠলেন। তিনি জানেন, ভাগবত অতি দুরূহ ও দুরবগাহ গ্রন্থ। যেমন এর চমৎকার কবিত্ব, তেমনি অপূর্ব এর তত্ব। অনেকক্ষণ ভাগবত পাঠ করে পুথি বাঁধবার সময় দেখলেন ওপাড়ায় নিস্তারিণী এসে উঠানে পা দিলে। নিস্তারিণী আজকাল ভবানীর
৩০৮