পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একটু দি—এই নাও খোকা—

 খোকা বললে—বাবা না খেলি আমি খাবে না। বাবা আগে খাবে।

 রামকানাই হাততালি দিয়ে বললে—বাঃ, ও-ও বাপের বেটা! কেডা গাও বাইরি?

 ঠিক সেই সময়ে গয়ামেম এসে ঘরে ঢুকলো, তার হাতে একছড়া কলা, ভূমিষ্ঠ হয়ে তাঁদের প্রণাম করে কলাছড়া এগিয়ে দিয়ে বললে—বাবা খাবেন।

 ভবানী ওকে দেখে একটু বিস্মিত হয়েছিলেন। বললেন—এখানে আস নাকি?

 গয়া বিনীত সুরে বললে—মাঝে মাঝে বাবার কাছে আসি। তবে আপনার দেখা পাবো এখানে তা ভাবি নি।

 —অতদূর থেকে আস কি ক’রে?

 “না বাবা, এখানে যেদিন আসি, চরপাড়াতে আমার এক দূর-সম্পক্কো বুনের বাড়ি রাতি শুয়ে থাকি।

 হঠাৎ তার চোখ গেল কোলে উপবিষ্ট খোকার তন্ময় মূর্তির দিকে। ওর কাছে গিয়ে বললে—এ খোকা কাদের? আপনার? সোনার চাঁদ ছেলেটুকুনি। বেশ বড়সড় হয়ে উঠেচে। আহা বেঁচে থাক—দেওয়ানজির বংশের চূড়ো হয়ে বেঁচে থাকো বাবা—

 ভবানী বললেন—কি কর আজকাল?

 —কি আর করব বাবা! দুঃখু-ধান্দা করি। মা মারা যাওয়ার পর বড় কষ্ট। এখানে তাই ছুটে ছুটে আসি বাবার কাছে, একটু চৈতন্যচরিতামৃত শুনতি।

 —বল কি! তোমার মুখে যা শুনলাম, অনেক ব্রাহ্মণের মেয়ের মুখে তা শুনি নি!

 —সে বাবা আপনাদের দয়া। মা মরে যেতি সংসার বড্ড ফাঁকা মনে হোলো—তারপর খুব সঙ্কুচিত ভাবে নিতান্ত অপরাধিনীর মতো বললে আস্তে আস্তে—বাবা, কাঁচা বয়েসে যা করি ফেলিচি তার চারা নেই। এখন বয়েস হয়েচে, কিছু কিছু বুঝতি পারি। আপনাদের মত লোকের দয়া একটু

৩৩০