পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাল দেখাতি হবে, না দেখাতি পারলে জরিমানা করবে।

 —ভালো। ওদের অমনি বিচার।

 —উণ্টে কচু গাল লাগলো-

 —রাজারাম অপ্রসন্ন মুখে বাদ হয়ে গিয়েই দেখলেন নবু গাজি দলবল নিয়ে সদর ফটকের কাছে দাড়িয়ে কারকুন রামহরি তরফদারের সঙ্গে একগাল হেসে কি বলচে। রাজারামকে সে এখনও বুঝতে পারেনি। স্বয়ং সাহেবও বোঝেন না। রাজারাম গম্ভীর স্বরে হাক দিয়ে বললেন—এই নবু গাজি, ইদিকি শুনে যাও।

 নবু গাজির হাসি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল; সে আজকের ব্যাপার নিয়ে হাসছিল না। সে সাহস তার নেই। তার একটা গোর চুরি কবে নিয়ে গিয়ে তাপুই জনৈক অসাধু কৃষাণ ন’হাটার বিক্রি করে, কি ভাবে সেই গোকুটা আবার নবু গাজি উদ্ধার করেছিল, তারই গল্প ফেদে নিজের কৃত্বিতে আত্নপ্রসাদের হাসি হাসছিল সে। রাজারামের স্বরে তাঁর প্রাণ উবে গেল। তাড়াতাড়ি এসে সামনে দাড়িয়ে সম্রামের সুরে বললে—কি বাবু?

 —যে জমিতে দাগ মেরেচি, সেটাতেই নীলের চাষ হবে। বুঝলে?

 নবু গাজি বিস্ময়ের সুরে বললে-সে কি বাবু, ছোট সাহেব যে বললেন -

 ছোট সাহেব বলেচেন বলেচেন। বাবার ওপরে বাবা আছে। এই বড় সাহেবের হুকুম। এই আমি আসচি বড় সাহেবের দপ্তর থেকে। ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া চলে না, বুঝলে নবু গাজি? তোমাকে নীলকুটির চুনের গুদোমে পুরে ধান খাওয়াবো, তবে আমার নাম রাজারাম চৌধুরী, এই তোমায় বলে দিলাম। তুমি যে কি রকম-তোমার ভিটেতে ঘুঘু, যদি না চরাই-

 নবু গাজি ভয়ে জড়সড় উঠয়ে গেল। দেওয়ান রাজাকামাকে ভয় করে না এমন রায়ত নীলকুঠির সীমানা সরহদ্দের মধ্যে কেউ নেই। তিনি ইচ্ছে করলে অনেক কিছু করতে পারেন। সে হাতজোড় করে বললে - মাপ করুন দেওয়ানজি, ক্ষ্যামা দ্যান। আপনি মা-বাপ, আপনি মারলি মারতে পারেন রাখলি রাখতে পারেন। মুই মুরুক্ষু মানুষ, আপনার সন্তানের মত। মোর

৩৬