পাতা:ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের গ্রন্থাবলী.djvu/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখবন্ধ। } t. বহুদিনের কথা—যখন নবঙ্গবন মাসিকপত্র প্রচারিত হইত, তখন একবার আমাদের প্রায় ঐক্ত দেবেন্ত্রবিজয় বস্তু মহাশয় ঐ পত্রে কবিবর ঈশ্বর গুপ্তের একটা সমালোচনা প্রকাশ কুঁক্লিাছিলেন। তিনি বলেন, “ঈশ্বর গুপ্ত;থাটা বাঙ্গালী কবি-গটি বাগদান) ভাত ? ডাল, তরকারী।” তিনি প্রতিভার শিখায় বৈদেশিক রসের পাক করিয়া কাব্য স্থাষ্ট করেন নাই। বাঙ্গলার অন্ত আধুনিক কবি প্রতিভাবান হইলেও উহার ইংরাজীভাবে—পাশ্চাত্যভাবে মুগ্ধ ও বিহ্বল। ঈশ্বর গুপ্তের সময় ইংরেজী লেখাপড়ার এত অধিক প্রচলন ছিল না। বাঙ্গালীৰু মস্তিক পাশ্চাত্য-ভাবে-পাশ্চাত্য রসে এত অধিক বিমূঢ় ছিল না। তাই ঈশ্বরগুপ্তের কবিতারঈশ্বর গুপ্তের লেখায়, ঈশ্বর গুপ্তের প্রতিভা-প্রভায় নিৰ্ম্মল নিষ্কলঙ্ক বাঙ্গালীত্ব বিকাশ হইয়াছে। তিনি খাট বাঙ্গালীর শেষ কবি। ** { ঈশ্বর গুপ্তের রচনা-ভঙ্গিমায়, শব্দ-প্রয়োগে, অলঙ্কার-বিষ্ঠাসে অনেকটা ভারতচন্দ্রর ভাবও ভঙ্গ পাওয়া যায়। তেমনি পদলালিতা, তেমনি রদপ্রাচুর্য, তেমনি শাড়ম্বর। ভারতচক্র এবং ঈশ্বর গুপ্ত বাঙ্গলা পল্প-সাহিত্যের আদিগুরু বলিলেও দোষ হয় না। কবিকঙ্কণে প্রাদেশিকতt ब्रिुङ्, কালিদাস o কৃত্তিবাসের অপ্রচলিত ভাব ও ভাষাব প্রয়োগ আছে, ভারতচঞ্জে এবং ঈশ্বর গুপ্তে তাহ অতি বিরল। ভারতচন্দ্র ও ঈশ্বর গুপ্ত বাঙ্গলার সর্বপ্রদেশের সর্কুসময়ের কবি। এখনও বাঙ্গলায় খাট বাঙ্গালীর অভাব নাই, সংখ্যার খাট বাঙ্গালী অত্যধিক ; খাটী:বাঙ্গাঙ্গী আধুনিক কৰুিগণের কাব্যরস বোল আনা উপভোগ করিতে পারেন না, কেন না, উহাতে বৈদেশিকতার তীব্রত আছে। কিন্তু মৃদুর শ্রীহট্ট হইতে মালদহ পর্যন্ত, জলপাইগুড়ির কোল হইতে হিজলী পর্যন্ত সকল প্রদেশের সাধারণ বাঙ্গল-নবীশ বাঙ্গালী ঈশ্বর গুপ্তকে বুঝিতে পারেন, ঈশ্বর গুপ্তেব ভাবে মুগ্ধ হইতে পারেন। এতাদৃশ সৰ্ব্বদেশের, সৰ্ব্বজনের কবি ঈশ্বর গুপ্তের আদর করা কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত বাঙ্গালীর কর্তব্য। ঈশ্বর গুপ্তের আদর না করিলে বাঙ্গালী বাঙ্গালী নামের গ্লানি করিবেন। ঈশ্বঃ গুপ্তের ন্যায় অনায়াসে প্যার লিখিতে বোধ হয়, আজকাল কোন বাঙ্গালীই পারেন না । ঈশ্বর শুধু ভাবা আমর ভুলিতে পারিব না, কেন না, ঈশ্বর গুপ্তের ভাষা বাঙ্গালীর বাঙ্গল ভাষা। আমরা তাই জনসমাজে ঈশ্বর গুপ্তের কবিতার নূতন সংস্করণ প্রচার করিলাম। এবার যাহা প্রকাশিত হইল, এমনি বৃহৎ পাঁচ খণ্ড পুস্তক প্রকাশিত হইলে তবে গুপ্ত কবির সকল পদ্ধ-রচনা বর্তমান বাঙ্গালীর হস্তগত হয়। বসুমতীর উপহার দিবার জন্য এত বড় বৃহৎ ব্যাপারের ব্যয় সঙ্কলান করিয়া আমরা একেবারে উঠতে পারি না। তাই এবার এই খণ্ড গ্রাহকগণের করে দিয়া আমাদের বিশ্বাস, ঈশ্বর গুপ্তের পরিচয় বাঙ্গালী পাঠক ভাল করিয়া পাইলে ভবিষ্যতে তাহার কাব্যের প্রচার-ব্যাপারে অন্ত কাহাকেও কষ্ট পাইতে হইবে না। বাঙ্গলা দেশে এখন গুণন্ত্র ও রসজ্ঞ ব্যক্তির অভাব নাই। একবার}র্তাহারা গুপ্ত কবির অদ্ভূত কাব্য-রসের আশ্বাধ পাইলে নিজেরাই কবিকীৰ্ত্তি বজায় রাপিবার জন্য উযোগী হইবেন, আমাদের ভরসা আছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে মুদ্রণকার্য্য করিবার জন্য আমরা চেষ্টার কিছুমাত্র ক্ৰটি করি নাই। আশা আছে, গ্রাহক ও পাঠকগণ আমাদিগকে উৎসাহিত করিয়া সুখী করবেন কিমধিকমিতি । বসুমতী জাফিস । | ঐকালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ব। ১৫ই জাখিন, ১৩৪৬ সাল।