পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
১০০৭

মাঝে মাঝে কুমিরে ধরিয়াও থাকে।

 পুকুরের মাঝখানে যে একটি ছোট মন্দিরের মতন দেখা যায়, উহা জগন্নাথের গ্রীষ্মবাস। গ্রীষ্মের সময় কিছুদিন জগন্নাথকে এই স্থানে আনিয়া রাখা হয়। স্থানটি অতি সুন্দর, কিন্তু দুঃখের বিষয়, ছবিটি তেমন ভালো উঠে নাই। তখন সন্ধ্যা হইয়াছিল, তাই ভালো করিয়া ফটো তোলা গেল না।

 ফটো তুলিবার জন্য এবারে পুরীর অনেক জায়গায় ঘুরিয়াছি, তাহাদের কথা ক্রমে বলিব। আমরা সমুদ্রের কাছেই ছিলাম, সুতরাং সমুদ্রের নিকটবর্তী অনেকগুলি জায়গায় ছবি তোলা হইয়াছে। আমাদের বাড়ি হইতে খানিক পশ্চিমে গেলেই নরিয়াদিগের গ্রাম। তাহারা সারি সারি ঘর বাঁধিয়া বাস করে। পাশাপাশি দুখানি ঘরের মাঝখানে কিছুমাত্র ফাঁক রাখে না। দরজা জানালার ধার অতি অল্পই ধরিয়া থাকে। হাওয়া তো ঘরের ভিতরে খেলেই না। জিজ্ঞাসা করিলে একজন বলিল, “অতটুকু ঘরে আবার কত হওয়া খেলিবে? ঘরে, উঠানে, বাগানে, আঁস্তাকুড়ে ঘণ্ট পাকাইয়া তাহার ভিতরে উহারা বাস করে।

 ইহারা একরকম হিন্দু। ইহাদের দেবদেবী আছে, পুরুত আছে, মন্দির আছে। মন্দির বলিতে একটা কিছু কাণ্ডকারখানা করিয়া বসিও না। সকলের চাইতে বড় মন্দিরটি ছাড়া আর কেননাটির ভিতরে মানুষ ঢুকিবার জায়গা নাই। অধিকাংশ মন্দিরই বাক্স প্যাটরার মতন ছোট ছোট চালাঘর মাত্র, উহার ভিতরে লাল, কালো, হলদে রঙের ছোট ছোট দেবতারা বড় বড় চোখ মেলিয়া যেন আশ্চর্য হইয়া বসিয়া থাকে। একটি দেবতার আবার ঘর পছন্দ হয় না, সে হাঁড়ির ভিতরে থাকিতে ভালোবাসে। মাঝে মাঝে পুরুত আসিয়া ইহাদের পূজা করিয়া যায়। নরিয়ারা ইহাদিগকে খুব মান্য করে, আর ইহাদের সম্বন্ধে অনেক আশ্চর্য কথা বলে। দুঃখের বিষয়, আমি দেবতাগুলির নাম ভুলিয়া গিয়াছি। একজন আছে, তাহাকে হাতি ঘোড়া দিয়া পূজা করিতে হয়। উহার মন্দিরের পাশে বিস্তর হাতি ঘোড়া পড়িয়া আছে। ছোট ছোট মাটির জিনিস। এক সময়ে ঠিক এইরকম হাতি ঘোড়া আমাদের কুমারেরা গড়িত। ছেলেবেলায় আমরা তাহা দিয়া খেলা করিয়াছি। কিন্তু আজকালকার খোকাদের হয়তো তাহা পছন্দই হইবে না। নরিয়াদের দেবতা ঐ হাতি ঘোড়া পাইয়াই যারপরনাই খুশি হয়। জানোয়ারগুলির অধিকাংশেরই হাত পা ভাঙ্গা। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘ভাঙ্গা অতি ঘোড়া কেন দিয়াছ?’ নরিয়া বলিল, “আমরা কেন ভাঙ্গা দিব? ঠাকুর উহাতে চড়িয়া চড়িয়া হাত পা ভাঙ্গিয়াছে।তখন শুনিলাম, যে বোজ নাকি রাত দুপুরের সময় ঐ দেবতা বেড়াতে বাহির হয়। এ সকল হাতি ঘোড়া তখন আর ওরূপ ছোট ছোট থাকেনা, উহারা সত্য সত্যই বড় বড় হাতি মোড়া হইয়া যায়, আর ঠাকুর তাহাদের পিঠে চড়িয়া ব্রহ্মাণ্ড ঘুরিয়া আইসে।

 এ কথা শুনিয়া একজন বলিল, আমি তো এইখানেই থাকিকই আমি তো একদিনও তোমাদের ঠাকুরকে ঘোড়া চড়িয়া বেড়াইতে দেখি নাই। নরিয়া বলিল, ‘দেখিলে কি না তুমি আবার বলিতে আসিতে।অর্থাৎ উইদের বিশ্বাস, যে সে সময়ে কেহঠাকুরের সামনে পড়িলে তৎক্ষণাৎ তাহার মৃত্যু হয়।

 নরিয়া্রা বড়ই গরিব আর পরিশ্রমী। উহাদের কেহ সহজে ভিক্ষা করিতে চাবেনা। সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গেলে নরিয়া ছেলেরা আসিয়া পয়সার জন্য বিরক্ত করে বটে, কিন্তু আমি কখনো তাহাদিগকে এমন কথা বলিতে শুনি নাই, যে ভিক্ষা দাও। কেহ হয়তো কতকগুলি