পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তখনই হুকুম দিল, ‘শীঘ্র ওটাকে বধিয়া লইয়া আইস।’ হুকুম পাওয়ামাত্রই বড় বড় রাক্ষসেরা মূষল, মুদগর হাতে মহা তেজের সহিত হনুমানকে বাঁধিয়া আনিতে চলিল। তাহাদিগকে দেখিয়া হনুমান সেই সিংহ-দরজার বিশাল হুড়কাটা হাতে লইয়া বলিল, ‘জয় রামচন্দ্রের জয়।’

 তারপর আর কয়েক মুহূর্তের বেশি বিলম্ব হইল না। ইহারই মধ্যে সে রাক্ষসগুলির মাথা গুঁড়া করিয়া, আবার সেই সিংহ-দরজায় উঠিয়া ভাল মানুষের মত বসিয়াছে—যেন সে কিছুই জানে না।

 খানিক পরে তাহার মনে হইল যে ঐ যে পাহাড়ের মতন বড় বাড়িটা দেখা যাইতেছে সেটাকে ভাঙিতে পারিলে ত বেশ হয়! যেমন কথা তেমনি কাজ। অমনি সেই বাড়িটাকে চুরমার করিয়া হনু আবার সিংহ-দরজায় উঠিয়া বসিয়া আছে।

 ততক্ষণে অসংখ্য পাহারাওয়ালা অস্ত্রশস্ত্র লইয়া সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। হনুমানও আর কিছু না পাইয়া, সেই ভাঙা বাড়ির একটা সোনার থাম লইয়াই সে-সকল পাহারাওয়ালাকে পিষিয়া দিল।

 এদিকে রাবণ জাম্বুমালীকে যুদ্ধে পাঠাইয়াছেন। কিন্তু তাহার বুক পরিঘের ঘায় ভাঙিতে হনুমানের অধিক সময় লাগিল না। তারপর মন্ত্রীর ছেলেরা যুদ্ধ করিতে আসিয়াছিল। তাহাদিগকেও হনুমান কয়েকটি কিল চড়েই শেষ করিয়া, আবার সেই সিংহ-দরজায় উঠিয়া বসিয়া রহিল।

 এইরূপে হনুমান লঙ্কায় যে কি ভয়ানক কাণ্ড বাধাইল তাহা কি বলিব! বড় বড় বীরেরা যুদ্ধ করিতে আসে আর হনু তাহাদিগকে গুঁড়া করিয়া দেয়। ঘোড়া দিয়া ঘোড়া মারে, হাতি দিয়া মারে, রাক্ষস দিয়া রাক্ষস মারে।

 দুর্ধর, প্রঘস, বিরূপাক্ষ ভাসকর্ণ আর যুপাক্ষ, ইহাদের এক-একজন অসাধারণ যোদ্ধা। হনুমান দুর্ধরের রথের উপর খালি লাফাইয়া পড়িয়াই রথ আর ঘোড়া-সুদ্ধ তাহাকে থেৎলা করিয়া দিল। তারপর শালগাছ দিয়া বিরূপাক্ষ ও যূপাক্ষকে শেষ করা, পর্বতের চূড়া দিয়া প্রঘস ও ভাসকর্ণকে পেষা আর এটাতে ওটাতে ঠোকাঠুকি করিয়া সঙ্গের রাক্ষসগুলির মাথা ফাটান, এ-সকল ত হনুর পক্ষে কেবল খেলা! সে-কাজ সে চক্ষের পলকে সারিয়া আবার সেই সিংহ-দরজায় উঠিয়া বসিল।

 ইহার পর রাবণের পুত্র অক্ষ আট ঘোড়ার রথে চড়িয়া যুদ্ধ করিতে আসিল। সে খুবই যুদ্ধ করিতে পারিত আর প্রথমে অনেক বান মারিয়া হনুমানকে একটু ব্যস্ত করিয়াই তুলিয়াছিল। কিন্তু তাহ অধিক সময়ের জন্য নহে। তাহার পরেই হনুমান এক চড়ে তাহার রথের আটটা ঘোড়াকে আর আট কিল মারিয়া রথখানিকে গুঁড়া করিয়া দিল। তখন অক্ষ রথ হইতে না নামিয়া আর যায় কোথায়? আর হনুও তখন তাহার পা ধরিয়া তাহাকে মাটির উপর এমনি এক আছাড় দিল যে তাহতেই বেচারা একবারে চুরমার! তারপর হনুমান আবার সেই সিংহ-দরজায় উঠিয়া বসিয়া রহিল।

 অক্ষের মৃত্যুর কথা শুনিয়া রাবণ তাহার বড় ছেলে ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠাইয়া দিলেন। ইন্দ্রজিতের মতন যোদ্ধা লঙ্কায় আর কেহ ছিল না। কিন্তু সে আসিয়াও প্রথমে হনুমানের কিছু করিতে পারে নাই। আর, কি করিয়াই বা পরিবে? বাণ আসিবার আগেই হনুমান সরিয়া বসিয়া থাকে, কাজেই তাহা আর তাহার গায়ে লাগিতে পারে না। তাহা দেখিয়া ইন্দ্রজিৎ রাগের