পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



ছেলেদের রামায়ণ
১৫৯

পাছে অনেক রাক্ষস মরিয়াছে দেখিলে বানরদের সাহস বাড়িয়া যায়, এজন্য রাক্ষস মরিলেই অন্য রাক্ষসেরা তাহাকে সমুদ্রের জলে ফেলিয়া দিত। কাজেই ঔষধের গন্ধ তাহাদের নাকে পৌঁছাইতে পারিল না আর তাহারাও বঁচিল না।

 সকলে বাঁচিয়া উঠিল, কাজেই ঔষধের কাজ ফুরাইয়া গেল। তখন হনুমান আবার যেখানকার পাহাড়টি, সেইখানে তাহাকে রাখিয়া আসিল।

 পরদিন সন্ধ্যার সময় দলে দলে বানর মশাল হাতে লইয়া লঙ্কায় গিয়া ঢুকিল। হনুমান সেবার লঙ্কার সকল স্থান পোড়াইতে পারে নাই, কিন্তু এবার আর কিছু বাকি রহিল না। রাক্ষসেরা বানরদিগকে বাধা দিবে কি, তাহারা নিজেরাই তখন পলাইতে ব্যস্ত। তাহদের সে সময়কার চিৎকার একশত যোজন দূর হইতে শোনা গিয়াছিল।

 একদিকে লঙ্কা ধক্‌-ধক্‌ করিয়া জ্বলিতেছে আর একদিকে সেই রাত্রিতেই আবার যুদ্ধ আরম্ভ হইয়াছে। এবারে রাক্ষসদিগের সেনাপতি কুম্ভ নিকুম্ভ যুগাক্ষ শোণিতাক্ষ আর প্রজঙ্ঘ।

 সে রাত্রিতে রাক্ষস আর বানরেরা ভয়ানক যুদ্ধ করিয়াছিল, কিন্তু বানরদিগের সঙ্গে রাক্ষসেরা আঁটিতে পারিল না। অঙ্গদ, দ্বিবিদ আর মৈন্দ যুগাক্ষ, প্রজঙ্ঘ আর শোণিতাক্ষের সহিত অনেক যুদ্ধ করিয়া, তাহাদিগকে মারিয়া ফেলিল।

 কুম্ভ দেখিল যে বানরেরা রাক্ষসদিগকে মারিয়া শেষ করিতেছে। তখন সে ধনুর্বাণ লইয়া ভয়ানক যুদ্ধ আরম্ভ করিল। সে সময়ে আর তাহার সামনে কেহ টিকিয়া থাকিতে পারিল না। মৈন্দ, দ্বিবিদ, অঙ্গদ, সকলেই তাহার বাণে অজ্ঞান হইয়া গেল। তাহার বাণে চারিদিক এমনি করিয়া ছাইয়া গিয়াছিল যে জাম্ববান আর সুষেণ আসিয়া, বাণের জন্য কিছুই দেখিতে পাইল না। তারপর সুগ্রীব আসিয়া অনেক গাছপাথর ছুঁড়িয়া মারিল, কিন্তু তাহাতেও প্রথমে কুম্ভের কিছুই হইল না। তখন সুগ্রীব তাহার ধনুক কড়িয়া লইল।

 ধনুক গেলে কাজেই তখন কুস্তি। কুম্ভ আসিয়া সুগ্রীবকে জড়াইয়া ধরিল। সুগ্রীবও তাহার সহিত খুব একচোট কুস্তি করিয়া শেষে তাহাকে একেবারে সমুদ্রের জলে ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিল। কিন্তু কুম্ভ তাহাতে হটিবার লোক নহে। সে সেইখান হইতে ভিজা কাপড়ে উঠিয়া আসিয়া সুগ্রীবের বুকে এক কিল মারিয়াছে। সুগ্রীবেরও কাজেই তখন সেই কিলের শোধ দেওয়া দরকার হইল। আর সেই শোধ দিতে গিয়া, সুগ্রীবের কিলে কুম্ভের প্রাণও বাহির হইয়া গেল। কাজেই তাহার আর যুদ্ধ করিতে হইল না।

 এদিকে ভাইয়ের মৃত্যুতে নিকুম্ভ রাগে জ্বলিয়া একেবারে আগুন। তাহার হাতে একটা ভয়ানক পরিঘ। সেই পরিঘের ভয়ে কেহই তাহার নিকটে ঘেঁষিতে পারিতেছে না। সেই পরিঘ লইয়া সে হনুমানকে মারিতে আসিল। কিন্তু হনুমান কি পরিঘকে ভয় করিবার লোক? পরিঘকে হনুমান ভয় করা দূরে থাকুক, বরং সেটাই তাহার বুকে ঠেকিয়া গুঁড়া হইয়া গেল; আর তাহার এক কিলের চোটে নিকুম্ভের বর্ম ছিঁড়িয়া একেবারে খান-খান হইল।

 এই সময়ে নিকুম্ভ কোন ফাঁকে তাড়াতাড়ি হনুমানকে ধরিয়া লইয়া এক ছুট দিয়াছিল। কিন্তু হনুমান তাহাতে ঠকিবে কেন? সে প্রচণ্ড এক কিল মরিয়া তাহার হাত হইতে ছাড়াইয়া গেল। তাহার পরেই দেখা গেল যে সে ঘোরতর গর্জনে নিকুম্ভকে মাটিতে ফেলিয়া, তাহার বুকে চড়িয়া বসিয়াছে। তখন নিকুম্ভের চিৎকার দেখে কে! যাহা হউক, তাহাকে অধিক