পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
উপেন্দ্রকিশাের রচনাসমগ্র

চ্যাঁচাইতে হইল না; কারণ, তাহার পরক্ষণেই হনুমান তাহার মাথাটা টানিয়া ছিঁড়িয়া ফেলিল।

 ইহার পর যে যুদ্ধ করিতে আসিল, সে সেই খরের পুত্র। তাহার নাম মকরাক্ষ। তাহার যুদ্ধের কথা আর কি শুনিবে? রাম তাহাকে হাসিতে হাসিতে যে-সকল বাণ মারিলেন, তাহতেই সে বেচারার প্রাণ বাহির হইয়া গেল।

 তখন রাবণ আর কাহাকে পাঠাইবে? ইন্দ্রজিৎ ভিন্ন আর লোক নাই। কাজেই ইন্দ্রজিৎ আবার যুদ্ধ করিতে আসিল। তাহার যুদ্ধ কিরূপ, তাহা তা জানাই আছে। সে চোরা-যুদ্ধ করিয়া রাম লক্ষ্মণকে সে খুবই কষ্ট দিল।

 তখন লক্ষ্মণ বলিলেন, “দাদা ব্রহ্মাস্ত্র মারিয়া কেন একেবারে সকল রাক্ষস শেষ করিয়া দাও না?” রাম বলিলেন, “যে যুদ্ধ করিতে আসিয়াছে তাহাকেই মারা যায়; যাহারা যুদ্ধ করিতেছে না, তাহাদিগকে কি মারা উচিত? আচ্ছা, আজ ইন্দ্রজিতের রক্ষা নাই! আজ যদি সে মাটির নীচে গিয়াও লুকায়, তথাপি তাহাকে মারিবই।” এ কথা শুনিয়া ইন্দ্রজিৎ তখনই সেখান হইতে চলিয়া গেল।

 খানিক পরে দেখা গেল যে একটি স্ত্রীলোককে রথে লইয়া ইন্দ্রজিৎ আবার আসিয়াছে। স্ত্রীলোকটি দেখিতে ঠিক সীতার মতন, কিন্তু আসলে তাহা রাক্ষসদের গড়া, মায়া, অর্থাৎ জাদুর পুতুল ভিন্ন আর কিছুই নহে। সেই মায়া সীতার চুলে ধরিয়া ইন্দ্রজিৎ তাহাকে খড়্গ দিয়া কাটিতে যাইতেছে, আর মায়া সীতা ‘হা রাম!’ বলিয়া চিৎকার করিতেছে। তাহা দেখিয়া হনুমান আর সহ্য করিতে না পারিয়া বলিল, “দুষ্ট, সীতাকে যদি মারিস, তবে তোকে এখনই যমের বাড়ি পাঠাইব!” কিন্তু হনুমান এ কথা বলিয়া তাহার কাছে ছুটিয়া যাইবার পূর্বেই, ইন্দ্রজিৎ সে পুতুলটার মাথা কাটিয়া তাহাকে বলিল, “এই দেখ্ তোদের সীতাকে কাটিয়া ফেলিয়াছি।”

 তখন হনুমান রাগে দুঃখে অস্থির হইয়া রাক্ষসদের সহিত ভয়ানক যুদ্ধ আরম্ভ করিল। কিন্তু খানিক যুদ্ধ করিয়াই সে ভাবিল “সীতা যখন মরিয়া গিয়াছে তখন কিসের জন্য যুদ্ধ করিব? আগে রামকে গিয়া এই সংবাদ দিই, তারপর তিনি যাহা বলেন তাহাই করা যাইবে।”

 ইন্দ্রজিৎ সীতাকে কাটিয়া ফেলিয়াছে, এ কথা শুনিয়া রাম দুঃখে নিতান্তই কাতর হইয়া পড়িলেন। এমনকি, সে সময়ে তাঁহাকে শান্ত করাই সম্ভব হইত না, যদি বিভীষণ সেখানে না আসিত।

 বিভীষণ সকল কথা শুনিয়া রামকে বলিল, “সীতাকে কাটিয়াছে, ইহা কখনই হইতে পারে না। যাহা কাটিয়াছে তাহা নিশ্চয়ই মায়া সীতা। তোমরা সেটাকে যথার্থ সীতা মনে করিয়া কাঁদিতে বসিয়াছ আর ততক্ষণে সেই দুষ্ট নিকুম্ভিলা যজ্ঞ করিতে গিয়াছে। যজ্ঞ শেষ করিতে পারিলে আর কেহই তাহাকে যুদ্ধের সময় দেখিতে পাইবেনা; কাজেই সকলে তাহার নিকটে হারিয়া যাইবে। যজ্ঞ শেষ না হইলে তাহার নিজেকেই মরিতে হইবে। পাছে বানরেরা যজ্ঞে বাধা দেয়, তাই সে এরূপ করিয়া তোমাদিগকে ভুলাইয়া রাখিয়া গিয়াছে। এই যজ্ঞ শেষ না হইতেই উহাকে মারিতে হইবে। লক্ষ্মণ, আমার সঙ্গে চল; তুমি ভিন্ন আর কেহ এ কাজ করিতে পারিবে না।” এই বলিয়া লক্ষ্মণকে লইয়া বিভীষণ যজ্ঞ আটকাইতে চলিল।

 কিন্তু যজ্ঞ আটকাইতে গেলেই ত আর অমনি তাহা আটকাইয়া ফেলা যায় না। রাক্ষসেরা তাহা সহজে করিতে দিবে কেন? কাজেই সেখানে রাক্ষসদের সহিত লক্ষ্মণের ভয়ানক যুদ্ধ