পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ছেলেদের মহাভারত
১৬৯

আদি পর্ব

খন আমরা যাহাকে দিল্লী বলি, সেই দিল্লীর কাঁছে, অনেকদিন আগে, হস্তিনা বলিয়া একটা নগর ছিল৷

 এই হস্তিনার রাজা বিচিত্রবীর্যের ধৃতরাষ্ট্র আর পাণ্ডু নামে দুই পুত্র ছিলেন৷ ধৃতরাষ্ট্র বয়সে বড় ছিলেন বটে, কিন্তু তিনি অন্ধ ছিলেন৷ অন্ধ যে, সে রাজ্য পায় না৷ কাজেই, বয়সে বড় হইয়াও ধৃতরাষ্ট্র রাজা হইতে পারিলেন না, রাজা হইলেন ছেটো ভাই পাণ্ডু৷

 রাজ্য না পাওয়ায় ধৃতরাষ্ট্র দুঃখিত হইয়াছিলেন বৈকি! তবুও যদি পাণ্ডুর ছেলে হওয়ার আগে তাঁহার ছেলে হইত, তবে সে দুঃখ তিনি সহিয়া থাকিতে পারিতেন, কারণ তাঁহাদের ছেলেদের মধ্যে যে বড়, তাহারই রাজ্য পাইবার কথা ছিল৷ কিন্তু ধৃতরাষ্ট্রের কপালে তাহাও হইল না, পান্ডুরই আগে ছেলে হইল৷ ধৃতরাষ্ট্রের ছেলেরা যখন বুঝিল, তাহারা রাজ্য পাইবে না, তখন হইতেই তাহাবা প্রাণ ভরিয়া পান্ডব (অর্থাৎ পান্ডুর ছেলে)-দিগকে হিংসা করিতে লাগিল৷

 ধৃতরাষ্ট্রের ছেলেদের মধ্যে দুর্যোধন সকলের বড়, তারপর দুঃশাসন, তারপর আরো আটানববুই জন৷ সবসুদ্ধ তাহারা একশত ভাই৷ ইহা ছাড়া দুঃশলা নামে তাহাদের একটি বোনও ছিল৷

 পাণ্ডুর পাঁচ পুত্র৷ সকলের বড় যুধিষ্ঠির, তারপর ভীম, তারপর অর্জুন, তারপর নকুল ও সহদেব নামে দুটি যমজ ভাই৷ ইঁহারা এক মায়ের ছেলে নহেন৷ পাণ্ডুর দুই রানী ছিলেন৷ বড়র নাম কুন্তী, ছোটর নাম মাদ্রী৷ যুধিষ্ঠির, ভীম আর অর্জুন, ইহারা কুন্তীর ছেলে৷ নকুল সহদেব মাদ্রীর ছেলে৷ দুই মা হইলে কি হয়? ইঁহাদের মধ্যে যে ভালোবাসা ছিল তেমন ভালোবাসা এক মায়ের ছেলেদের ভিতরেও কম দেখা যায়৷

 এক-একজন দেবতা পাণ্ডু কে এই-সকল পুত্রের এক-একটি দিয়াছিলেন৷ ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে দিয়াছিলেন, পবন ভীমকে দিয়াছিলেন, ইন্দ্ৰ অর্জুনকে আর অশ্বিনীকুমার নামক দুই দেবতা নকুল ও সহদেবকে৷ এইজন্য লোকে বলে যে যুধিষ্ঠির ধর্মের পুত্র, ভীম পবনের পুত্র, অর্জুন ইন্দ্রের পুত্র, নকুল সহদেব অশ্বিনীকুমারদিগের পুত্র৷ এই-সকল দেবতা ইঁহাদিগকে অতিশয় স্নেহ করিতেন৷

 কিন্তু হায়! এই পৃথিবীতে অল্পদিনই ইঁহারা সুখে কাটাইতে পারিয়াছিলেন৷ পাণ্ডু ইহাদিগকে খুব ছোট রাখিয়াই হঠাৎ মারা গেলেন, মৃত্যুর সময় মাতা মাদ্রী তাঁহার কাছে ছিলেন, তিনি মনের দুঃখ সহিতে না পারিয়া পাণ্ডুর চিতার আগুনে ঝাঁপ দিয়া সেই দুঃখ দূর করিলেন৷ ইহার পর আর এমন কেহই রহিল না, যে আপনার বলিয়া মা কুন্তী আর পাঁচটি ভাইয়েরউপেন্দ্র–২২