পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

এ কথা বলিলে, কাজেই পাঁচজনের সহিত তোমার বিবাহ হইবে।’ সেই কন্যা এখন দ্রৌপদী হইয়াছে। আর শিবের আজ্ঞা, কাজেই পাঁচজনের সহিত তাঁহার বিবাহ হইতেই হইবে৷”

 তারপর বিবাহের আয়োজন আরম্ভ হইল। কত লোক, কত বাদ্য, কত গান, কত সাজ, কত আলল, কত পূজা, কত আনন্দ! হাতি ঘোড়া, রত্ন অলংকার, দাস দাসী প্রভৃতি যৌতুকই (অর্থাৎ দ্রুপদ পাণ্ডবদিগকে যাহা দিলেন)—বা কত! যাহারা দেখিতে আসিয়াছিল, এত আয়োজন আর এমন সুন্দর বরকন্যা দেখিয়া তাহাদের চক্ষু জুড়াইয়া গেল, আর দামী পোশাক আর অলংকার উপহার পাইয়া তাহাদের মন খুশি হইয়া গেল৷

 দুর্যোধন আর তাঁহার দলের লোকেরা দেখিলেন যে, পাণ্ডবদিগকে তাঁহারা পোড়াইয়া মারিয়াছে বলিয়া মনে মনে এত সুখ বোধ করিয়াছিলেন, সেই পাণ্ডবদিগের সহিতই দ্রৌপদীর বিবাহ হইয়াছে। যিনি লক্ষ্য বিঁধিয়াছিলেন তিনি অর্জুন আর যিনি শল্যকে আছড়াইয়াছিলেন, তিনি ভীম ছাড়া আর কেহ নহেন৷

 তখন তাঁহাদের যে দুঃখ! তাঁহারা এত চেষ্টা করিলেন, তবুও পাণ্ডবেরা মরিলেন না, কি অন্যায়! সেই পুরোচনটা নিতান্তই গাধা ছিল, তাহারই বুদ্ধির দোষে পাণ্ডবেরা বাঁচিয়া গিয়াছে!

 ক্রমে এই সংবাদ বিদুরের নিকট পৌঁছিল। তাহা শুনিবামাত্রই তিনি ধৃতরাষ্ট্রের নিকট গিয়া বলিলেন, “মহারাজ! স্বয়ম্বব সভায় কৌরবেরাই জিতিয়াছে৷”

 অবশ্য পাণ্ডবেরাও তো কৌরব, কাজেই বিদুর ঠিকই বলিয়াছেন। কিন্তু ধৃতবাষ্ট্র তাহা বুঝিতে না পারিয়া বলিলেন, কি সৌভাগ্য! কি সৌভাগ্য! বিদুর কি সুখের সংবাদই শুনাইলে! শীঘ্র দুর্যোধন আর দ্রৌপদীকে এখানে নিয়া আসুক৷’

 বিদুর বলিলেন, ‘মহারাজ, পাণ্ডবরা দ্রৌপদীকে পাইয়াছেন। তাঁহারা সকলেই ভালো আছে, আর সেখানে তাঁহাদের অনেক বন্ধু জুটিয়াছে!’

 এই সংবাদে ধৃতরাষ্ট্রের মনে খুবই দুঃখ হইল। কিন্তু তিনি সামলাইয়া গিয়া বলিলেন, ‘তা ভালোই হইয়াছে। আমি আমার নিজের ছেলেদের চেয়েও পাণ্ডবদিগকে ভালোবাসি। আমার ছেলেগুলি বড় দুষ্ট, উহারা পাণ্ডবদের হাতে খুবই সাজা পাইবে৷’

 বিদুর বলিলেন, মহারাজ, সকল সময়ই যেন আপনার এইরূপ বুদ্ধি থাকে৷

 এই কথাবার্তার কথা জানিতে পারিয়া দুর্যোধন আর কর্ণ গোপনে ধৃতরাষ্ট্রকে বলিলেন, ‘আপনি বিদুরের কাছে শত্রুর প্রশংসা করিলেন কেন? উহাদিগকে এইবেলা জব্দ না করিতে পারিলে যে শেষে আমাদের বিপদ হইবে৷’

 ধৃতরাষ্ট্র বলিলেন, ‘আমারও সেই মত। কেবল বিদুরের কাছে মনের কথা লুকাইবার জন্য পাণ্ডবদের প্রশংসা করি। ও তাহা কিছুই বুঝিতে পারে না। সুযোদন! তুমি কি করিতে চাহ, বল৷

 সুযোধন কে, বুঝিলে?—দুর্যোধন। বাপ কিনা ছেলেকে আদর করিয়া মিষ্ট নামে ডাকিয়া থাকে, তাই ধৃতরাষ্ট্র দুর্যোধনকে বলিতেন, ‘সুযোধন’৷

 দুর্যোধন পাণ্ডবদিগকে মারিবার জন্য কতরকম উপায়ের কথাই ভাবিয়া রাখিয়াছেদন—

 ‘পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া বাধাইয়া দিলে উহারা নিজেরাই কাটাকাটি করিয়া মরিবে৷'

 ‘দ্রুপদকে ধন দিয়া বশ করিলেও কাজ চলিতে পারে৷’