পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবাই বললে, ‘আচ্ছা।’

শিয়াল বললে, ‘তবে একবার তোমরা সবাই মিলে গান ধর তো! দেখি কার কেমন গলার জোর!’ অমনি পাঁচ হাজার শিয়াল মিলে চ্যাঁচাতে লাগল, ‘হুয়া, হুয়া, হুয়া, হুয়া!’

বারো হাজার ব্যাঙ বললে, ‘ঘোঁৎ, ঘোঁৎ, ঘেঁয়াও ঘেঁয়াও।’

সাত হাজার শালিক বললে-

‘ফড়িং সঙ্গে সঙ্গে চারিজনং চকিৎ কাট কাট কাট গুরুচরণ!’

দুহাজার হাঁড়িচাঁচা বললে, ‘ঘ্যাঁচা, ঘ্যাঁচা, ঘ্যাঁচা, ঘ্যাঁচা, ঘ্যাঁচা!’

চার হাজার ঘুঘু বললে, ‘রঘু, রঘু, রঘু, রঘু, রঘু, রঘু!’

তিন হাজার কুঁক্কো বললে, ‘পুৎ, পুৎ, পুৎ, পুৎ, পুৎ, পুৎ!’

উনিশ শো উৎক্রোশ বললে, ‘হাঁ আঃ, হাঁ আঃ, হাঁ আঃ, ও হো হো হো হো!’

আর যত বৌ-কথা-ক, ময়ূর, ভগদত্ত আর চোখ-গেল, তারাও সবাই মিলে যার-যার নিজের গান ধরতে ছাড়ল না।

তখন শুনতে কেমন হয়েছিল, তা সেখানে থাকলে বোঝা যেত। রাজার বাড়ির লোকেরা দূর থেকে তা শুনে তো ভয়ে কাঁপতেই লাগল। তারপর যখন শিয়াল রাজামশাইকে খবর দিতে এল, তখন তিনি ভারি ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘শিয়াল পণ্ডিত, ওটা কিসের গোলমাল?’

শিয়াল বললে, ‘ওটা আমাদের বাজনা আর লোকজনের শব্দ।’

শুনে রাজা তো ভয়ে অস্থির হলেন। এত লোককে কোথায় বসাবেন, কি দিয়ে খাওয়াবেন, ভেবে ঠিক করতে পারলেন না। তিনি শিয়ালকে বললেন, ‘তাই তো, কি হবে?’

শিয়াল বললে, ‘ভয় কি মহারাজ! আমি এখুনি গিয়ে লোকজন সব ফিরিয়ে দিচ্ছি। খালি রাজাকে আপনার কাছে আনব।’

রাজা তখন বড়ই খুশি হয়ে শিয়ালকে পাঁচ হাজার টাকা বকশিশ দিলেন। শিয়াল ফিরে এসে মাঠের মাঝখানে অনেক টাকার মুড়ি-মুড়কি, আর ছোট ছোট মাছ ছড়িয়ে দিয়ে বললে, ‘তোমরা খাও।’ অমনি তার সঙ্গের সব শিয়াল, ব্যাঙ আর পাখি মিলে কাড়াকাড়ি করে সে সব খেতে লাগল। শিয়াল গ্রামের লোকদের প্রাণ ভয়ে সন্দেশ খাইয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিল। তারপর জোলাকে নিয়ে রাজার কাছে এল। আসবাব সময় তাকে শিখিয়ে আনল, ‘খবরদার! কথা বলো না যেন, তবে কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না।’