পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

বধ করিলেন।

 তারপর অচল ও বৃষক নামক শকুনির দুই ভাই অর্জুনের হাতে মারা গেলে, শকুনির সহিত তাহার যুদ্ধ আরম্ভ হয়।

 শকুনি নানারূপ মায়া জানিতেন। প্রথমে তিনি এমন এক কৌশল করিলেন যে তাহাতে নানারূপ উৎকট অস্ত্র কোথা হইতে আসিয়া, কৃষ্ণ আর অর্জুনের গায়ে পড়িতে লাগিল। আর ভয়ংকর জন্তু এবং রাক্ষসগণ তাহাদিগকে মারিতে আসিল। কিন্তু অর্জুনের বাণের সম্মুখে এসকল অস্ত্র বা জন্তু এক মুহূর্তও টিকিতে পারিল না।

 তখন শকুনি হঠাৎ চারিদিক অন্ধকার করিয়া ফেলিলেন।

 অর্জুন জ্যোতিষ্ক অস্ত্রে সে অন্ধকার দূর করিলে, সেই ধুর্ত কোথা হইতে জলের বন্যা আনিয়া সকলকে ভাসাইয়া দিবার আয়োজন করিলেন। অর্জুনের আদিত্যাস্ত্রে জল সহজেই দূর হইল। তারপর আর শকুনির মায়ায় কুলাইল না; তিনি অর্জুনের বাণ খাইয়া পলায়ন করিলেন।

 এইরূপে অর্জুন ক্রমে কৌরব সৈন্যদিগকে নিতান্ত অস্থির করিয়া তোলায় তাহারা আর রণস্থলে টিকিয়া থাকিতে পারিল না। পাণ্ডব সৈন্যগণ ইহাতে উৎসাহ পাইয়া দ্রোণকে আক্রমণ করিবার আয়োজন করিল। তখন যে যুদ্ধ হইয়াছিল, তাহা বড়ই সাংঘাতিক। একদিকে দ্রোণ মহারোষে হাজার হাজার সৈন্য মারিতেছে, অপরদিকে অশ্বত্থামা নীলকে সংহার করিয়াছে। ইহার মধ্যে আবার একদল সংশপ্তক আসিয়া, অর্জুনকে ডাকিয়া লইয়া গিয়াছে।

 বাস্তবিক তখন পাণ্ডব সৈন্যদের একটু বিপদই হইয়াছিল। কিন্তু এমন সময় ভীম সেখানে আসিয়া উপস্থিত হওয়ায়, আবার তাহাদের উৎসাহ দেখা দিল। ততক্ষণে অর্জুনও, সংশপ্তকদিগকে মারিয়া আবার ফিরিয়া আসিয়াছেন। তখন তাহার বাণে কৌরবদের কি দুর্গতিই হইল! তাহারা চ্যাঁচ্যাঁয় আর শুধু বলে কর্ণ! কর্ণ!

 সে ডাক শুনিয়া কর্ণ তখনই তিনটি ভাইসমেত আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভাই তিনটি তো আসিয়াই অর্জুনের হাতে মারা গেল;নিজে কর্ণও বুকে হাতে সাত্যকির বাণ খাইয়া কম শিক্ষা পাইলেন না। দ্রোণ, দুর্যোধন আর জয়দ্রথ ছুটিয়া আসিয়া তাহাকে না ছাড়াইলে বিপদ হইত।

 তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত দুইপক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ চলিল। সন্ধ্যার সময় যুদ্ধ থামাইয়া সকলে শিবিরে আসিলেন।

 সেদিনও যুধিষ্ঠিরকে ধরিতে না পারায়, দুর্যোধনের নিকট লজ্জা পাইয়া, দ্রোণ প্রতিজ্ঞা করিলেন যে, পরদিন চক্রব্যুহ নামক অতি ভয়ংকর ব্যহ প্রস্তুত করিয়া তিনি পাণ্ডবপক্ষের একজন মহারথীকে বধ করিবেন।

 সেদিন প্রভাত হইবামাত্রই সংশপ্তকেরা আসিয়া অর্জুনকে ডাকিয়া লইয়া গেল। এই অবসরে দ্রোণ সেই সাংঘাতিক চক্র’ ব্যুহ রচনা করিয়া পাণ্ডবদিগের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। পাণ্ডবেরা তখন এমনই বিপদে পড়িলেন যে কি বলিব। অর্জুন অনুপস্থিত, এখন শুধু অভিমন্যু ছড়া আর কেহই সে বৃহে প্রবেশ করিতে জানে না। সুতরাং দ্রোণ সুবিধা পাইয়া সফলকে অস্থির করিয়া তুলিলেন।