পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

করামাত্র ভীম বুঝিতে পারিলেন যে, দুর্যোধনের উরু ভাঙ্গিয়া তাহাকে সংহার করিতে হইবে। গদাযুদ্ধে নাভির নীচে আঘাত নিষিদ্ধ বটে, কিন্তু ইহা ভিন্ন দুর্যোধনকে বধ করা যাইতেছেনা। সুতরাং ভীম এইটুকু অন্যায় করিয়াই নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিতে প্রস্তুত হইলেন।

 আবার যুদ্ধ চলিল। তারপর উভয়েই ক্লান্ত হইয়া কিঞ্চিৎ বিশ্রাম করিলেন। তারপর আবার যুদ্ধ চলিল। এই সময়ে ভীম ইচ্ছা করিয়াই দুর্যোধনকে একটু আঘাতের সুযোগ দিলেন। তাহাতে দুর্যোধন প্রবল বেগে ভীমকে আক্রমণ করিতে আসিবামাত্র ভীম তাহাকে গদা ছুঁড়িয়া মারিলেন;দুর্যোধন বিদ্যুতের মতো সেই গদা এড়াইয়া ভীমকে সাংঘাতিকভাবে আঘাত করিলেন। যাহা হউক, ভীম সেই ভয়ানক আঘাতও আশ্চর্যরূপে সহিয়া রহিলেন। তাঁহার শান্তভাব দেখিয়া দুর্যোধনের মনে হইল বুঝি তাহার কি অভিসন্ধি আছে। সুতরাং তিনি তাহাকে আর আঘাত না করিয়াই ত্বরায় ফিরিয়া আসিলেন।

 তারপর কিঞ্চিৎ বিশ্রাম করিয়া, ভীম অসীম রোষে দুর্যোধনকে আক্রমণ করিতে ছুটিলেন। দুর্যোধন তাহাঁকে এড়াইবার জন্য লাফ দিয়া শূন্যে উঠিবামাত্র ভীম দারুণ গদাঘাতে তাহাব দুই উরু ভাঙ্গিয়া দিলেন। তখন ভগ্নপদে নিতান্ত অসহায়ভাবে দুর্যোধনকে ধরাশায়ী হইতে হইল। অমনি ভীম তাহার মাথায় পদাঘাতপূর্বক বলিলেন, “রে দুরাত্মা! সভার মধ্যে গরু গরু’ বলিয়া বিদ্রুপ করিয়াছিলি, আর দ্রৌপদীকে অপমান করিয়াছিল, তাহার এই সাজা।” এইরূপে গালি দিতে দিতে ভীম দুর্যোধনের মাথায় আবার পদাঘাত করিলেন।

 ভীমের এই ব্যবহারে নিতান্ত দুঃখিত হইয়া, যুধিষ্ঠির তাঁহাকে বলিলেন, “ভীম’ সৎ উপায়েই হউক, আর অসৎ উপায়েই হউক, তোমার প্রতিজ্ঞা তুমি রাখিয়াছ,এখন ক্ষান্ত হও। ইহার মাথায় পদাঘাত করিযা আব পাপ কেন বাড়াও ইহার অবস্থা দেখিলে এখন বড়ই দুঃখ হয়। এ আমাদের ভাই তুমি ধার্মিক হইযা কেন উহাকে পদাঘাত করিতেছ?”

 তারপর তিনি দুর্যোধনকে বলিলেন, “ভাই, তুমি দুঃখ করিও না। তোমার দোষেই যুদ্ধ হইয়াছে সন্দেহ নাই। কিন্তু তুমি দেত্যাগপূর্বক এখনি স্বর্গে যাইবে, আব আমরা এখানে সুহৃগণের শোকে চিরকাল দারুণ দুঃখ ভোগ করিব।”

 এই বলিয়া যুধিষ্ঠির চোখের জল ফেলিতে লাগিলেন।

 ভীমের কাজটি অতি অন্যায় হইয়াছিল;উপস্থিত যোদ্ধারাও ইহাতে সন্তুষ্ট হন নাই। বলরাম তো লাঙ্গল উঠাইয়া, তখনি ভীমকে বধ করিতে চাহিয়াছিলেন। কৃষ্ণের অনেক চেষ্টায় তিনি তাহাকে ছাড়িয়া দিলেন বটে, কিন্তু তাঁহার রাগ দূর হইল না। তিনি কৃষ্ণকে বলিলেন, “তুমি যত চেষ্টাই কর না কেন, ভীম যে নিতান্ত অন্যায় কবিয়াছেন, এ বিশ্বাস আমার মন হইতে দূর করিতে পারিবে না।”

 এই বলিয়া বলবাম সেখান হইতে চলিয়া গেলে, যোদ্ধারা সকলে মিলিয়া দুর্যোধনের মৃত্যুতে আনন্দ প্রকাশ করিতে লাগিলেন। তাহারা বলিলেন, “হে ভীম! আজ তুমি দুষ্ট দুর্যোধনকে মারিয়া বড়ই ভালো কাজ করিলে। আমাদের ইহাতে যারপরনাই আনন্দ হইয়াছে।”

 তখন কৃষ্ণ সেই যোদ্ধাদিগকে বলিলেন, “যে শক্র মরিতে বসিয়াছে তাহাকে বকিলে কি হইবে? এ দুষ্ট এখন শত্রুতা বা বন্ধুতা কিছুরই উপযুক্ত নহে। আমাদের ভাগ্যের জোরে এতদিনে পাপী মারা গেল, এখন চল আমরা এ স্থান হইতে প্রস্থান করি।”

 এ কথায় দুর্যোধন, দুহাতে মাটিতে ভর দিয়া, মাথা তুলিয়া, কৃষ্ণকে বলিলেন, “হে কংসের দাসের পুত্র! তোমার দুষ্ট বুদ্ধিতেই আমাদের বীরেরা মারা গেলেন। তোমার মতো পাপী, নির্দয়