পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ঘুরিতে তাহারা একটা বনের ভিতরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

 সারাদিনের কঠিন পরিশ্রমের পর নিজেরাও অতিশয় ক্লান্ত, ঘোড়াগুলিও আর চলিতে পারে না। এখন একটু বিশ্রাম না করিলেই নয়। তাই সেই বনের ভিতরে একটা প্রকাণ্ড বটগাছ দেখিতে পাইয়া, তাঁহারা রথ হইতে নামিলেন। নিকটেই জলাশয় ছিল। ঘোড়াগুলিকে খুলিয়া দিয়া, তাঁহারা সেই জলাশয়ে মুখ হাত ধুইয়া, সন্ধ্যাপূজা সারিয়া, বটগাছের নীচে বিশ্রাম করিতে লাগিলেন। অল্পক্ষণের ভিতরে কৃপ আর কৃতবর্মার ঘুম আসিল। কিন্তু দুঃখে আর চিন্তায় অশ্বত্থামার ঘুম হইল না। তিনি চারিদিকে চাহিয়া দেখিতে লাগিলেন।

 রাত্রি হইয়াছে গাছের ডালে কাকেরা তাদের বাসায় সুখে নিদ্রা যাইতেছে। এমন সময় কোথা হইতে একটা প্রকাণ্ড পেচক আসিয়া, ঘুমের ভিতরে, অসহায় অবস্থায়, সেই কাকগুলিকে বধ করিতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে পেচক কাকগুলিকে মারিয়া শেষ করিল, একটিও অবশিষ্ট রহিল না।

 এই ঘটনা দেখিয়া অশ্বত্থামার মনে হইল, ‘তাই তো আমিও তো এই উপায়ে শত্রুদিকে বধ করিতে পারি।’ ইহার পব আর অশ্বত্থামা চুপ করিয়া থাকিতে পারিলেন না। তিনি তখনই কৃপকে ডাকিয়া বলিলেন, “মামা! এইরূপ করিয়া আমরাও শত্রুদিগকে বধ করিব।”

 কৃপাচার্য প্রথমে কিছুতেই এমন কাজে মত দেন নাই, কিন্তু ভাগিনেয়ের পীড়াপীড়িতে শেষটা তাহাকে সম্মত হইতে হইল। তখন তিনজনে মিলিয়া, সেই নিষ্ঠুব পাপকার্য সাধনের জন্য, পাণ্ডব শিবিরের দিকে যাত্রা করিলেন।

 পাণ্ডব শিবিরের কাছে আসিয়া অশ্বত্থামা দেখিলেন যে, একজন অতিশয় উজ্জ্বল পুরুষ শিবিরের দরজায় দাঁড়াইয়া আছেন। সেই উজ্জ্বল পুরুষ স্বয়ং মহাদেব; কিন্তু অশ্বথামা তাহাকে চিনিতে না পারিয়া, তাঁহাকে সেখান হইতে তাড়াইবাব জন্য, বাণ মারিতে লাগিলেন।

 অস্ত্রে মহাদেবের কি হইবে? অশ্বত্থামা বাণ, শক্তি, অসি, গদা, যাহা কিছু মারিলেন, সমস্তই সেই উজ্জ্বল পুরুষ গিলিয়া ফেলিলেন। অশ্বত্থামা সকল ক্ষমতা শেষ করিয়া, তারপর আর কি করবেন, ঠিক করিতে পারিলেন না।

 এমন সময় তাঁহার মনে হইল, ‘শিবের পূজা করি, তাহা হইলে আমার কাজ হইবে।’

 এই মনে করিয়া তিনি শিবের স্তব করিতে করিতে, নিজ শরীর উপহার দিয়া তাঁহাকে তুষ্ট করিবার জন্য, আগুন জ্বালিয়া তাহাতে ঝাঁপ দিলেন। তখন শিব সন্তুষ্ট না হইয়া আর যান কোথায়? তিনি কেবল যে দরজা ছাড়িয়া দিলেন, তাহা নহে, তাঁহাকে একখানি ধারালো খড়্গও দিলেন, এবং নিজে তাহার শরীরে প্রবেশ করিয়া, তাঁহার বল বাড়াইতে ত্রুটি করিলেন না।

 তারপর যাহা ঘটিল, বলিতে বড়ই ক্লেশ বোধ হয়। অশ্বত্থামা সেই খড়্গ হাতে শিবিরে প্রবেশ করিলেন;কৃপ আর কৃতবর্মাকে দরজায় রাখিয়া গেলেন, যেন কেহ পলাইয়া যাইতে না পারে।

 শিবিরে প্রবেশ করিয়াই অশ্বত্থামা সকলের আগে ধৃষ্টদ্যুম্নের ঘরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। যে তাঁহার পিতাকে এমন নিষ্ঠুরভাবে বধ করিয়াছিল, তাহার উপর রাগ হইয়াই স্বাভাবিক। সেই রাগেই তিনি সকলের আগে, ধৃষ্টদ্যুম্নকে মারিবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছিলেন।

 সুন্দর কোমল শয্যার উপরে ধৃষ্টদ্যুম্ন নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাইতেছেন, এমন সময় অশ্বত্থামার পদাঘাতে তার ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। তিনি চমকিয়া উঠিয়া বসিবামাত্র, অশ্বত্থামা তাঁহাকে চুলে