পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 কুঁকড়ো আবার খুব করে তার আঙুল মটকে নিয়ে, সেই পাহাড়ের নীচে গিয়ে এমনি গুঁতো মারল যে তাতে দশহাত গভীর এক প্রকাণ্ড দীঘি হয়ে গেল, আর তাতে জলও হল তেমনি। তা দেখে ঊনা আর একটু হলেই ‘মাগো!’ বলে চেচিয়ে ফেলেছিল, কিন্তু সে ভারি বুদ্ধিমতী মেয়ে, তাই তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে বলল, ‘চলো, এখন তোমাকে কিছু পিঠে খেতে দিই গে।’

 এই বলে ঊনা কুঁকড়োকে ঘরে এনে দিয়েছে সেই পিঠে খেতে। সে বেটাও এমনি লোভী—একেবারে তার দশটা তুলে নিয়ে মুখে দিয়েছে। দিয়েই সে ‘উঃ—হুঃ—হুঃ’ বলে এমনি ভয়ংকর চেঁচিয়ে উঠল যে, আর একটু হলেই তাতে ঘরের ছাত উড়ে যেত। বেজায় ব্যস্ত হয়ে সেই পিঠে চিবোতে গিয়ে তার চারটে দাঁত ভেঙে রক্তারক্তি হয়ে গিয়েছে। কাজেই না চেঁচাবে কেন?

 উনা তখন বলল, ‘আরে অত চেঁচিও না, খোকার ঘুম ভেঙে যাবে। আমি ভাবছিলাম তুমি জোয়ান লোক, ঐ পিঠে খেতে তোমার ভাল লাগবে। ফিঙে আর খোকা ও পিঠে খুব খায়।’

 বলতে বলতে সেই খোকাটা কাথার ভিতর থেকে যাঁড়ের মত চেঁচিয়ে বলল, ‘অঁ-য়্যা-য়া বদ্দ খিদে পেয়েথে! পিতে থাব।’ খোকার গলার সে আওয়াজ শুনেই ত কুঁকড়োর পিলে চমকে উঠেছে। উনা অবশ্য খোকার জন্য ভালো পিঠে করে রেখেছিল। তাই থেকে কয়েকটা খেতে দিল। কুঁকড়ো ত আর তা জানে না, সে দেখল, যাতে তার নিজের দাঁত ভেঙে গেছে, ‘খোকা’ তাই কপাকপ খাচ্ছে। কাজেই সে ভাবল, ‘বাবা গো, খোকাই যদি অমনি পিঠে খেতে পারে তবে তার বাবা না জানি কি করতে পারে! ভাগ্যিস সে বেটা বাড়ি নেই।’

 এমন সময় ‘খোকা’ আবার বলল, ‘পাথল দে। দল বা’ল কবব!’ উনা তাকে একতাল ছানা, আর কুঁকড়োকে একটা সাদা পাথর দিয়ে বলল, ‘খোকার ঐ এক খেলা—পাথর চিপে জল বার করে। তুমিও একখানা পাথর টিপে দেখোত।’ কুঁকড়ো সেই পাথর প্রাণপণে টিপেও তা থেকে জল বার করতে পারল না। খোকার ছানা থেকে অবশ্য জল বার হতে লাগল। তা দেখে কুঁকড়ো ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘বাবা গো! আমি এই বেলা পালাই। এই খোকার বাবা এলে আমাকে আস্ত রাখবেনা। আমার খালি দেখতে ইচ্ছা করছে যে এই খোকার দাঁতগুলো কেমন যা দিয়ে সে ঐ পিঠেগুলো খায়।’

 এই বলে সে তাড়াতাড়ি গিয়ে যেই যেই খোকার মুখে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়েছে অমনি খোকাও কটাস করে তার সবকটি আঙ্গুল একেবারে গোড়াসুদ্ধ কামড়িয়ে নিয়েছে। সেই আঙুলেই নাকি ছিল কুঁকড়োর জোর, কাজেই সে আঙুল কাটা যেতে হায় হায় করে মাটিতে পড়ে গেল।‘খোকা’ও তখন লাফিয়ে উঠে তার সেই দেড়শো হাত লম্বা শালের ছড়িগাছি দিয়ে তার হাড় ভাঙতে আর কিছুমাত্র দেরি করল না।