পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৪৯৭

করিতে লাগিল। তখন দেবতারাও বেগতিক দেখিয়া ইন্দ্রকে ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন।

 এখন ইন্দ্র বলিলেন, “তাই ত এই নিতান্ত অশিষ্ট খোকাটাকে ত বধ না করিলে চলিতেছে না। ‘কোথায় রে আমার বজ্র’ বলিতে বলিতে তিনি স্কন্দকে বজ্র ছুঁড়িয়া মারিলেন। তিনি জানিতেন না যে, ইহাতে হিতে বিপরীত হইবে। বজ্র স্কন্দের গায় লাগিল বটে, কিন্তু তাহাতে তাঁহার মৃত্যু হওয়ার বদলে তাঁহার শরীর হইতে বিশাখ নামক একজন অতি ভয়ঙ্কর পুরুষ, শক্তি হাতে বাহির হইয়া, ইন্দ্রের সহিত যুদ্ধ করিতে প্রস্তুত হইলেন। কাজেই তখন ইন্দ্র জোড়হাতে বলিলেন, “আর কাজ নাই, আমার ঢের হইয়াছে; খোকা, আমাকে ক্ষমা কর।”

 তাহা শুনিয়া স্কন্দ বলিলেন, “আচ্ছা তবে আর আপনাদের কোন ভয় নাই।”

 স্কন্দের তখন ছয় দিন মাত্র বয়স হইয়াছে, ইহারই মধ্যে তাঁহার এত বিক্রম। তাহা দেখিয়া বড় বড় মুনিরা আসিয়া স্কন্দকে বলিলেন, “তোমার যখন এত তেজ, তখন তুমিই ইন্দ্র হইয়া স্বর্গ শাসন কর।”

 তাহা শুনিয়া স্কন্দ বলিলেন, “আপনারা যাহা বলিলেন, তাহা হইলে, আমার কি করিতে হইবে?”

 মুনিগণ বলিলেন, “ইন্দ্র হইলে দুষ্ট লোককে সাজা দিতে হইবে, আর যাহাতে সংসার ভালরকম চলে তাহা দেখিতে হইবে।”

 স্কন্দ বলিলেন, “অত ঝঞ্ঝাটে আমার কাজ নাই, আমি ইন্দ্র হইতে পারিব না।”

 তখন ইন্দ্র বলিলেন, “হে বীর, তোমার শক্তি অতিশয় অদ্ভুত। অতএব তুমিই এখন হইতে ইন্দ্রপদ লইয়া দেবতাদের শত্রুদিগকে বধ কর।”

 তাহাতে স্কন্দ বলিলেন, “সে কি কথা? আপনিই ত্রিভুবনের রাজা, আমি আপনার আশ্রয়ে থাকিয়া আপনার আজ্ঞা পালন করিব, অনুমতি করুন।”

 ইন্দ্র বলিলেন, “তবে তুমি আমার সেনাপতি হও।”

 এ কথায় স্কন্দ আহ্লাদের সহিত সম্মত হইলে, তখনই তাঁহাকে দেবতাগণের সেনাপতি করিয়া দেওয়া হইল। সে সময়ে সকলে মিলিয়া যে খুব আনন্দ করিয়াছিল তাহা সহজেই বুঝিতে পারা যায়, তাহার কথা বেশি করিয়া বলার প্রয়োজন দেখি না।

 তারপর স্কন্দ কাঞ্চন পর্বতে পরম সুখে বাস করিতে লাগিলেন। স্বর্গে যতরকম আশ্চর্য এবং সুন্দর খেলনা পাওয়া যাইত, দেবতারা তাহার সমস্তই তাঁহাকে আনিয়া দিতেন। চুষি, ঝুমঝুমি, হাতি, ঘোড়া, ঢোল, পটকা, ভেঁপু প্রভৃতি বিশ্বকর্মা নিশ্চয়ই খুব চমৎকার করিয়া গড়িতে পারিতেন। তাহা ছাড়া, ঐরাবতের গলার একটা ঘণ্টাও ইন্দ্র তাঁহাকে দিয়াছিলেন, তাহা লইয়া নাড়াচাড়া করিতে তাহার যে বড়ই ভাল লাগিত, এ কথা আমি নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারি।

 এইখানে আবার সেই দেবসেনা নাম্নী কন্যার কথা বলি। ব্রহ্মা যে বলিয়াছিলেন, ‘উহার উপযুক্ত পাত্র একটি হইবে’, এ কথা তিনি স্কন্দের কথা ভাবিয়াই বলিয়াছিলেন। সুতরাং শেষে স্কন্দের সহিতই সেই কন্যার বিবাহ হইয়ছিল।

 ইহার মধ্যে একদিন পর্বতাকার অসংখ্য দানব আসিয়া দেবগণকে আক্রমণ করিল, সে সময় স্কন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, সুতরাং, দানবেরা যে প্রথমে দেবগণকে নিতান্তই

উপেন্দ্র—৬৩