পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তাঁহাকে কামড়াইয়া দিল।

 এমন দুঃখের কথা আমাদের বলিতে এবং শুনিতেই কত কষ্ট হইতেছে, যাহারা সে ঘটনায় উপস্থিত ছিল, তাহাদের হয়ত কষ্টের আর সীমাই ছিল না। এইমাত্র প্রমদ্বরা কত হাসিতেছিলেন, মুহূর্তের মধ্যে সে হাসির আলো নিভিয়া গেল। সোনার শরীর ছাইয়ের মত হইয়া মাটিতে লুটাইয়া পড়িল।

 সঙ্গিনীরা তখন ভয়ে অস্থির হইয়া চিৎকার করিতে লাগিল। সেই চিৎকারে আশ্রমের সকলে ছুটিয়া আসিয়া দেখিলেন, সর্বনাশ হইয়া গিয়াছে। এত আনন্দের ভিতরে হঠাৎ এমন বিপদ উপস্থিত হওয়াতে, ক্ষণকালের জন্য মুনিরাও হতবুদ্ধি হইয়া গেলেন। তাঁহারা সকলে প্রমদ্বরার মৃত দেহের চারিধারে বসিয়া কাঁদিতে লাগিলেন, কাহারো মুখে কথা সরিল না। তখনো দেখিলে মনে হইতেছিল, যেন প্রমদ্বরার মৃত্যু হয় নাই, তিনি ঘুমাইতেছেন। মুখখানি কালো হইয়াও যেন পূর্বের চাইতে মিষ্ট দেখা যাইতেছিল।

 রুরু সেখানে ছিলেন, আর মেয়েদের চিৎকার শুনিয়া সকলের সঙ্গে ছুটিয়াও আসিয়াছিলেন, সেখানে আসিয়া সকলে কাঁদিতে বসিল, আর তিনি পাগলের মত হইয়া ঊর্দ্ধশ্বাসে বনের দিকে ছুটিয়া পলাইলেন। তাঁহার মোটামুটি মনে হইল যে, প্রমদ্বরা মরিয়া গিয়াছেন। কিন্তু তাঁহাকে আর ফিরিয়া পাইবেন না, এ কথা কিছুতেই তাহার মন মানিতে চাহিল না।

 রুরু ক্রমে গভীর বনের ভিতরে ঢুকিয়া, মাটিতে গড়াগড়ি দিয়া ভয়ানক কাঁদিতে লাগিলেন। কাঁদিতে কাঁদিতে হঠাৎ তাহার প্রাণ যেন তেজে পরিপূর্ণ হইয়া গেল। তিনি তৎক্ষণাৎ উঠিয়া দাঁড়াইয়া, স্বর্গের দিকে দৃষ্টি পূর্বক উচ্চৈঃস্বরে বললেন—

 “আমি যদি দান করিয়া থাকি, যদি তপস্যা করিয়া থাকি, যদি ভক্তিপূর্বক গুরুজনেব সেবা করিয়া থাকি, তবে আমার প্রমদ্বরা বাঁচিয়া উঠুক। আমি জন্মাবধি যত পূণ্য সঞ্চয় করিয়াছি, তাহার বলে আমার প্রমদ্বরা উঠিয়া দাঁড়াক!”

 রুরুর এই কথা স্বর্গে গিয়া পৌঁছিল। তাহার পবেই তিনি দেখিলেন যে, সেই অন্ধকার বন আলো করিয়া দেবদূত আসিয়া তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইয়াছেন।

 দেবদূত বলিলেন, ‘রুরু, মানুষ একবার মরিলে ত আর সে ফিরিয়া আসিতে পারে না। সুতরাং তুমি যাহা চাহিতেছ, তাহা কি করিয়া হইবে? প্রমদ্বরার আয়ু শেষ হইয়াছিল, তাই তাহার মৃত্যু হইয়াছে। সুতরাং তুমি আর দুঃখ করিও না।’

 দেবদূতের কথা শুনিয়া রুরু বলিলেন, তবে কি আমার প্রমদ্বরাকে পাইবার কোন উপায় নাই?’

 দেবদূত বলিলেন, ‘আছে! তুমি যদি একটি কাজ করিতে পার, তবে প্রমদ্বরাকে আবার বাঁচান সম্ভব হয়।’

 রুরু বলিলেন, ‘বল, সে কি কাজ। আমি এখনই তাহা করিতেছি।’

 দেবদূত বলিলেন, ‘দেবতাগণ বলিয়াছেন যে, তুমি যদি অর্ধেক আয়ু প্রমদ্বরাকে দিতে পার, তবে সে সেই পরিমাণ সময়ের জন্য আবার তোমার নিকট আসিতে পারে।’

 রুরু বলিলেন, “আমি আমার অর্ধেক আয়ু প্রমদ্বরাকে দিলাম। সুতরাং সে আবার বাঁচিয়া উঠুক।”

 এ কথায় দেবদূত যমের নিকট গিয়া বলিলেন, ‘হে যম, রুরু প্রমদ্বরাকে তাঁহার অর্ধেক