পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

পাপ দূর হইবে তোমাদেরও দুঃখ যাইবে। তোমরা কিছুকাল সাবধানে অপেক্ষা কর।”

 বিষ্ণুর উপদেশে অশ্বমেধ যজ্ঞ করিয়া ইন্দ্রের পাপ দূর হইল বটে, কিন্তু একবার স্বর্গে ফিরিয়া আসিয়াও নহুষের ভয়ে তাঁহাকে পুনরায় পলায়ন করিতে হইল। ইহাতে শচীদেবীর মনে যে কি দারুণ ক্লেশ হইল, তাহা কি বলিব? তিনি উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করিতে করিতে বলিলেন, “হে ধর্ম! যদি আমি কখনো দান করিয়া থাকি, যদি কখনো অগ্নিতে আহুতি প্রদান করিয়া থাকি, যদি কখনো গুরুজনকে তুষ্ট করিয়া থাকি, আর সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা রাখিয়া থাকি, তবে যেন আমি আমার স্বামীকে প্রাপ্ত হই।”

 ইন্দ্র যে কোথায় পলায়ন করিয়াছিলেন, উপশ্রুতি নাম্নী এক দেবী তার সন্ধান জানিতে। শচীর দুঃখে নিতান্ত দুঃখিত হইয়া সেই উপতি দেবী তাঁহার নিকটে অসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহার পরম সুন্দর স্নেহময় মূর্তি দেখিয়া শচী যার পর নাই সম্মান এবং আদরের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে মা?”

 উপশ্রুতি বলিলেন, “দেবি আমি উপশ্রুতি, তোমাকে দেখিতে আসিয়াছি। তুমি একান্ত পুণ্যবতী এবং পতিপরায়ণা, তোমার মঙ্গল হউক। তুমি আমার সহিত আইস, আমি তোমাকে ইন্দ্রের নিকটে লইয়া যাইব।”

 উপশ্রুতির কথায় শচী পরম আহ্লাদের সহিত তাঁহার সঙ্গে চলিলেন। তাহারা দেবতাদিগের বাসস্থান পার হইয়া, হিমালয় পার হইয়া উত্তরদিকে কতদূর যে গেলেন, তাহার অবধি নাই। যাইতে যাইতে শেষে তাহারা এক মহাসমুদ্রের ধারে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সে সমুদ্রে নানারূপ বৃক্ষলতায় পরিপূর্ণ একটি দ্বীপ, সেই দ্বীপের মাঝখানে শতযোজন বিস্তৃত একটি সুন্দর সবোবর। সেই সরোবরে, নানাবর্ণের অসংখ্য পদ্মের মধ্যে একটি শ্বেতবর্ণের পদ্ম খুব উঁচু বোটায় ফুটিয়া বড়ই শোভা পাইতেছিল। উপশ্রুতি এবং শচী সেই পদ্মের বোঁটাব ভিতরে ইন্দ্রকে খুঁজিয়া বাহির করিলেন।

 শচীকে দেখিয়া ইন্দ্র নিতান্ত আশ্চর্য এবং আহ্লাদিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি এখানে কেমন করিয়া আসিলে? আর আমি যে এখানে আছি তাহাই বা কি করিয়া জানিলে?”

 এ কথায় শচী সকল সংবাদ ইন্দ্রকে শুনাইলে ইন্দ্র তাঁহাকে অনেক সাহস দিয়া নহুষকে জব্দ করিবার উপায় শিখাইয়া দিলেন। সেই উপায় শিখিয়া শচীর মনে বড়ই আনন্দ হইল, এবং সেইমত কাজ করিবার জন্য স্বর্গে ফিরিয়া আসিতে তিনি আর একমুহূর্তও বিলম্ব করিলেন না।

 শচীকে ফিরিয়া আসিতে দেখিয়াই, নহুষ বলিলেন, “তুমি কবে আমার সেবা করিতে আসিবে?”

 শচী বলিলেন, “আপনি যখন আমাকে লইয়া যাইবার উপযুক্ত একখানি পাল্কিতে চড়িয়া আমাকে নিতে আসিবেন, তখনই আমি যাইব!”

 নহু ইহাতে একটু আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে আবার কেমন পাঙ্কি?”

 শচী বলিলেন, “এমন পাল্কি হওয়া চাই যে, তেমন আর কাহারো নাই সকলের পাল্কি বেহারায় বয়, কিন্তু আপনি যে পাল্কিতে চড়িয়া আসিবেন, তাহা বড়বড় মুনিরা বহিবে।”

 নহুষ বলিলেন, “এ আর কত বড় একটা কথা?”

 তখনই মুনি-ঋষিদিগের বড় বড় কয়েকজনকে পাল্কি কাঁধে করিয়া আসিতে হইল, সেই