পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
সেকালের কথা
৮২৩

বাস্তবিক সেকালের জন্তুগুলির ভিতরে মাছ কুমির, পাখি ইত্যাদিতে কেমন একটা খিচুড়ি পাকাইয়া গিয়াছিল। একটাকে ধরিয়া খাইতে পারিলে অনেক প্রকারের জন্তু খাওয়ার ফল হইত। ভাবিয়া দেখিলে ইহাতে তেমন আশ্চর্য হইবার কিছু নাই। আজকাল ওরূপ জন্তু দু-একটা বাঁচিয়া থাকিলে আমরা উহাদের সম্বন্ধে কোন কথাই আশ্চর্য মনে করিতাম না। এখন নাকি ওরূপ কিছু নাই, তাই এগুলি এত অদ্ভুত হইয়া দাঁড়াইয়াছে। জন্তুর কথা বলিতে গিয়া সময়ের কথা কতকটা ভুলিয়া গিয়াছিলাম। ডাইনোসর সবগুলি যে পৃথিবীতে ঠিক একই সময়ে দেখা দিয়াছিল, তাহা নহে। যাহাদের কথা আগে বলিয়াছি তাহারাই যে আগে ছিল, আর যাহাদের কথা পরে বলিয়াছি তাহাদের সকলেই যে পরে আসিয়াছিল, তাহাও নহে। টেরোড্যাক্টাইলগুলি, ইকথিয়োসোর প্রভৃতির সময় হইতেই ছিল। ইগুয়ানোন প্রভৃতি টেরোড্যাক্টইল ও আর্কিওপটেরিক্সের পরে জন্মিয়াছিল। আবার, প্লীসিয়োসোরগুলি প্রায় ইগুয়ানোডন প্রভৃতির সময় পর্যন্ত বাঁচিয়াছিল। শুধু যে বাঁচিয়াছিল তাহা নহে শেষকালের প্লীসিয়োসোরগুলিই বেশি বড় হইত। যে সকল ডাইনোসরের কথা আর্কিপ্টে রিক্সের হাড় বলিয়াছি, তাহা ছড়াও ছোট বড় অনেক ডাইনোসর ছিল। আন্টোসোর আশি নববই ফুট লম্বা হইত। ডিপ্লোডোক নামক আর একটা ডাইনোসর প্রায় ৫০ ফুট ছিল। ডাইনোসরেরা উভচর ছিল;অর্থাৎ তাহারা জলেও থাকিতে পারিত আর ডাঙয়ও থাকিতে পারিত। তবে অধিক সময় যে তাহারা ডাতেই কাটাইত তাতে সন্দেহ নাই। ডাইনোসর গড়া অনেক কুতীর-জাতীয় জলচর জন্তুও তখন ছিল। ইহাদের দস্তুরমতন পা ছিল না, ইকথিয়োসোর, প্লীসিয়োসোরসের মতন ডানা হইত। এই সকল জন্তুর অনেকগুলি খুব সরু আর খুব লম্বা—দেখিতে সাপের মতন ছিল। ইহাদের মধ্যে মোসামোর প্রায় আশি ফুট লম্বা হইত। ইসমোসোর ৫০ ফুট ছিল। এ কথা সহজেই মনে হইতে পারে যে এতদিনে পৃথিবীর বয়স ঢের বাড়িয়া গিয়াছে। এই সময়ে পৃথিবীর অবস্থা অনেকটা এখনকার গরম দেশগুলির মন ছিল। মেরুর কাল্পে স্থানগুলিত এত ঠা ছিল না;সেখানে এত বরফও লিনা। গ্রীনল্যাণ্ডে তখন আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের গাছপালার ন্যায় গাছপালা বিস্তর জন্মিত। আজকালকার বড় বড় গারে মতন অনেক গাছ ছিল। তাল নারিকেল জাতীয় গারেও অভাব ছিল না। এই সময়েই পৃথিবীতে খড়ির উৎপত্তি হয়। তোমরা যে খড়ি দিয়া বোর্ডে লেখ, দাঁত পরিষ্কার কর, সেই খড়ি অসংখ্য শামুক ঝিনুকের খোলা পচিয়া এই সময়েই জন্মিয়ালি।