পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৩৭

 আমি যখন খুব ছেলেমানুষ ছিলাম, তখন আমাদের বাড়িতে একটি ভদ্রলোক থাকিতেন। তাঁহার বাড়ির কাছে অনেক ভোঁদড় আছে। তাঁহার কাছে শুনিয়াছি যে ভোঁদড়ের প্রতিহিংসা লইবার বৃত্তিটা বড় প্রবল। কাহারো উপর কোনো কারণে চটিলে তাহাকে সহজে ছাড়িয়া দিতে চাহে না। ঐ ভদ্রলোকটির মুখে শুনিয়াছি যে, তিনি প্রায়ই রাত্রিতে ছোট নৌকায় উঠিয়া মাছ ধরিতে যাইতেন। একদিন নৌকায় সম্মুখে একটা ভোঁদড় দেখিতে পাইয়া তাহাকে এক খণ্ড বাঁশ দিয়া গুঁতা মারিলেন। গুঁতা খাইয়া ভোঁদড়টা ক্যাঁচম্যাচ্‌ করিয়া উঠিল; আর অমনি নৌকার চারিধাবে কতকগুলি ভোঁদড় মাথা জাগাইল। তিনি বলিয়াছে যে, “সৌভাগ্যের বিষয় সেখানে অনেকগুলি ভোঁদড় ছিল না, সুতরাং তাহারা নৌকা আক্রমণ করিতে সাহস পায় নাই, নতুবা সেদিন তাঁহার প্রাণ লইয়া ঘরে আসাই দায় হইত।”

 ভোঁদড়েরা মাছ ধরিয়া খায়; মাছ ধরিতে ইহারা এত পটু যে, কোনো কোনো দেশের জেলেরা ইহাদের সাহায্যে মাছ ধরিয়া বিস্তর পয়সা উপার্জন করে। ভোঁদড়দের সাহায্যে মাছ ধরারটা খুব সহজ ব্যাপার মনে করিও না। ভোঁদড় মাছ ভালো ধরিতে পারে সত্য; কিন্তু ধরিলে কি হইবে, পেটুক দুষ্ট ছেলের হাতে সন্দেশ দিলে যেরূপ হয়, অশিক্ষিত ভোঁদড়ের উপর মাছ ধরিবার ভাব দিলেও সেইরূপ হয়। ভোঁদড় মাছ পাইলেই খাইয়া ফেলে। খাইতে খাইতে পেট ভরিযা গেলেও মাছ ধরিতে ছাড়ে না। পেট ভরিলে মাছ খায় না, কিন্তু ধরিয়া তাহাকে দাঁতে টুকরা টুকরা করে। সুতরাং তখন ভোঁদড় মাছ না খাইলেও ওরূপ জন্তুকে মাছ ধরিতে দিয়া মৎস্যব্যবসায়ীর লাভ অতি অল্পই হয়।

 ভোঁদড়কে দিয়া মাছ ধরাইবার ইচ্ছা থাকিলে খুব ছোট ছানা ধরিয়া আনিতে হয়। সেই ছানাকে মাছ খাইতে দিবে না; কেবল নিরামিষ খাওয়াইয়া তাহাকে পুশিবে। ভোঁদড় সহজেই কুকুরের মতন পোষ মানে। কোনো জিনিস ছুঁড়িয়া ফেলিলে কুকুরের ন্যায় ভোঁদড়ও তাহা আনিয়া দিতে শিখিতে পারে। প্রথমত, তাহাকে এরূপে নানাপ্রকারের জিনিস আনিয়া দিতে শিখাইতে হয়। এই বিষয়টা খুব ভালোরূপ শিক্ষা হইলে শুনো মাছ দিয়া পরীক্ষা করিতে হয়। মাছের ছালের ভিতর খড় পুরিয়া তাহা দ্বারা প্রথমত পরীক্ষা করিলে আরো ভালো হয়। শুকনো মাছ আনিয়া দিতে শিক্ষা হইলে, অর্থাৎ যদি দেখ যে ভোঁদড় সেই শুক্‌নো মাছটাকে খাইয়া ফেলিবার মতো কোনো ভাব প্রকাশ না করে তাহা হইলে তাহাকে মরা মাছ আনিতে দিবে। মরা মারে পাঠ ভালোরূপ শিক্ষা হইলে তাহাকে নির্ভয়ে জলে ছাড়িয়া দিতে পার।

 ভোঁদড়ের লোম অতি কোমল। এইজন্য অনেক লোকে ভোঁদড় মারিয়া তাহার ছাল বিক্রয় করে। সেই ছলে বড়লোকের পা রাখিবার আসন তৈয়ারি হয়;আরো অনেক জিনিস তৈয়ারি হয়।

 অনেক স্থানে দেখিয়াছি নদীর পাড় ঢালু হইলে ছেলেরা তাহাকে জল দিয়া পিছল করিয়া লয়, এবং তাহার উপর দিয়া জলে পিছলাইয়া পড়িয়া খেলা করে। কানাড়া দেশীয় ভোঁদড়গুলিও এই খেলা জানে। সেখানে ঢালু ও মসৃণ বরফের উপর উপুড় হইয়া ভোঁদড়গুলি খেলা করিয়া থাকে। অনেক সময় তাহারা এইরূপে চল্লিশ হাত পর্যন্ত পিছলাইয়া যায়।