পাতা:কথামালা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (সচিত্র).pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
কথামালা

মহানন্দে ভল্লুককে বলিল, “এস বন্ধু! আমরা উভয়ে এই হৃষ্টপুষ্ট নরদেহ ভক্ষণ করি। আজ কাহার মুখ দেখিয়া উঠিয়াছিলাম, তাই আজ ভোজনের এমন সুন্দর আয়োজন দেখিতেছি।” এই বলিয়া শৃগাল হৃষ্টচিত্তে সেই মৃতদেহ ভক্ষণ করিতে ধাবমান হইল।

 লোভবশতঃ শৃগালের জিহ্বায় লালা নিঃসরণ হইতেছে দেখিয়া ভল্লুক হাসিয়া বলিল, “দেখ বন্ধু! আমি কত মহৎ! তুমি মৃত মনুষ্যের দেহ টানিয়া ছিড়িয়া ভক্ষণ করিতে ধাবমান হইয়াছি, অথচ আমি কখনও মরা মানুষ স্পর্শ করি না।”

 ধূর্ত শৃগাল কিছুমাত্র লজ্জিত না হইয়া উত্তর দিল, “ভাই হে! তোমার কথা সত্য, ইহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু তুমি যদি জীবিত মনুষ্যকে দেখিতে পাইলেই হত্যা না করিতে, তাহা হইলে আমি তোমার সাধুতার প্রশংসা করিতাম।”

 মানুষের মৃত্যুর পর মানুষের দেহেব প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অপেক্ষা মানুষের দেহে প্রাণ থাকিতে প্রাণ রক্ষা করা অধিকতর প্রশংসনীয়।

বন্ধুত্ব—সৌহৃদ্য।
বিচরন—ভ্রমন
নদীতটস্থ—নদীতীরবর্ত্তী।
শ্মশান ভূমিতে-শবদাহস্থানে।
দাহ-দাহন,পোড়ান।
তুমুল-ভয়ঙ্কর।
অর্দ্ধদগ্ধ-আধপোড়া।
মৃতদেহ-মড়া।
মহানন্দে-অত্যন্ত আহ্লাদে।
হৃষ্টপুষ্ট-মোটাসোটা।
হৃষ্টচিত্তে-প্রফুল্লমনে
ধাবমান হইল-দৌড়াইল।