পাতা:কমলা - আশুতোষ ভট্টাচার্য্য.pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কমলা Dingipinan অবধি সবার সুখ নষ্ট ক’রে দিয়েছি।-আমাকে আর মিছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা ক’রো না ! দুঃখিনী বা অভাগী ব’লে যদি আমার ওপরে তোমার দয়া প’ড়ে থাকে, মন থেকে সেটুকুকে মুছে ফেলতে চেষ্টা কর!—” কমলার বক্ষটা আবার স্ফীত হইয়া উঠিতেছিল, কথাগুলি একটু একটু জড়াইয়া আসিতেছিল, কণ্ঠস্বরটাও যেন একটু কম্পিত হইতেছিল ; একবার একটু থামিয়া, হৃদয়কে দৃঢ় করিয়া স্থিরভাবে পুনরপি বলিল,“সংসারে কি সবাই চেরকাল থাকে ? মেয়ে ছেলেদের নিয়ে মানুষ মা বাপের অভাবই ভুলে যায়। তোমাদেরও মেয়ে ছেলে হবে, জামাই হবে, বউ হবে, তাদের নিয়ে সুখে স্বচ্ছন্দে ঘরসংসার ক’রবে, তাদের মুখ দেখে এ অভাগীর কথাও ভুলে যাবে।—আমি অনেক দিন ধ’রে অনেক দুঃখ পেয়ে ঘুরে ঘুরে এদের সংসারে এসে, একটু স্বচ্ছন্দে থাকৃতে পেয়েছি, এদের ছেড়ে আমি আর এখন কোথাও যাব না, ঠাকুরপো! জীবনের বাকী কটা দিন এদের কাছে থেকেই কাটিয়ে দোব।” সুধাংশু বিস্ময়স্তিমিতনেত্ৰে কমলার দিকে চাহিয়া দেখিল, সে যেন মৰ্ম্মরের প্রতিমা! তাহার দীর্ঘ নয়নদ্বয় অশ্রুপরিপ্লাত, কিন্তু দৃষ্টি স্থির! বিশীর্ণ ওষ্ঠপ্ৰান্তে, প্ৰভাতের মান জ্যোৎস্নার মত মৃদু একটু হাসিও লাগিয়া আছে ; কিন্তু সে হাসিটুকু কেবল তাহার সঙ্কল্পের অটলতা প্ৰকাশ করিতেছিল মাত্র। পরিমান মুখকান্তি, যেন প্ৰভাত-কুমুদকরের ন্যায় প্ৰশান্ত-সুন্দর,-মূৰ্ত্তিটি যেন সদ্যঃশেষবর্ষণ জ্যোৎস্নাময়ী গভীর নিশীথিনীর ন্যায় মধুর-গভীর! : সুধাংশু কমলাকে গৃহে ফিরাইবার আশায় নিরাশ হইয়া, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া দুঃখিতচিত্তে ধীরে ধীরে বলিল, “তবে আমি এখন যাই ?” ૨૭ર.]