পাতা:কলিকাতা কল্পলতা - রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম অধ্যায়

বহুকাল পর্য্যন্ত এক ধনে বঞ্চিত ছিলেন। তাঁহার প্রথম বয়সে এক পুত্রসন্তান জন্মিয়া অতি অল্প বয়সে লোকান্তর গমন করে। জ্যেষ্ঠভ্রাতা নিঃসন্তান হইয়া পরলোকগত হন; মধ্যম কৃষচন্দ্রের একমাত্র পুত্র—সুতরাং সমুদয় বাৎসল্য ভ্রাতুষ্পত্রের প্রতি বর্ত্তিয়াছিল। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতুস্পুত্রের নাম জয়নারায়ণ ঘোষাল। বর্দ্ধমানেশ্বরের নিকট হইতে জমিদারী ইজারা গ্রহণের তাৎপর্য্য এই যে, মণ্ডলঘাট পরগণায় রাজা দুর্গারাম নামে একজন জমিদার ছিলেন। এক সময়ে বর্দ্ধমানাধিপতির জননী পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে যাত্রা করিয়া দুর্গারামের বাটীর নিকট হইয়া গমনকালে সেই সাময়িক রীতি অনুসারে দামামা ধ্বনি করিয়াছিলেন। তাহাতে দুর্গারাম ক্রোধোন্মত্ত হইয়া সদলবলে তীর্থানুরাগিণী মহিষীর তাম্বু লুট করেন। রাণী সেই অপমানে আর শ্রীক্ষেত্রে গমন না করিয়া অশ্রুমুখে স্বীয় পুত্রের নিকট দুর্গারামের অত্যাচার বিজ্ঞাপন করেন। তাহাতে বর্দ্ধমানধিপতি জ্বলিতাঙ্গ হইয়া সৈন্য প্রেরণপূর্ব্বক ঐ জমিদারের সমুদয় জমিদারী কাড়িয়া লন। দুর্গারাম বিষয় বিনাশে ক্ষুন্নমনে পলায়নপূর্ব্বক গভর্ণমেণ্ট কৌন্সিলে দেওয়ান গোকুল ঘোষালের প্রভুত্ব জানিয়া তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। দেওয়ানজি তাহাকে আশ্বাস দিয়া তাঁহার কন্যার সহিত ভ্রাতুস্পুত্রের বিবাহ দিবার প্রস্তাব করাতে দুর্গারাম তৎক্ষণাৎ তাহাতে সম্মত হন। কিন্তু বৈবাহিক সম্বন্ধ নির্ব্বন্ধ হইলে দেওয়ানজি তাঁহার উপকার করা দূরে থাকুক, বর্দ্ধমানপতিকে ভয়-মৈত্রী দেখাইয়া দুর্গারামের বিষয় শুদ্ধ আপনার ভ্রাতুস্পুত্রের নামে বহুলক্ষ টাকায় ইজারা লন। ঐ ইজারা বেমেয়াদী অর্থাৎ তাহাতে কালের নির্দ্দেশ ছিল না। কিন্তু এরূপ অন্যায় উপায়ে বিষয়োপার্জন প্রায় কখন ভোগ হয় না। গোকুলচন্দ্র, পুত্রমুখ দর্শনে লোলুপ হইয়া পুনঃপুনঃ বিবাহ করিলেন। তাহাতে এক পুত্রসন্তান জন্মিলে সেই পুত্রের প্রতি

৬৫