পাতা:কাব্যের কথা - চিত্তরঞ্জন দাশ.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O কাবের কথা বৈষ্ণব কবিতার মধ্যে প্ৰাণের সাড়া পাই ; সেই প্ৰাণকে যে জানে না, জানিবার চেষ্টাও করে না, সে কেমন করিয়া বুঝিবে ? বৈষ্ণবকবিদের শ্ৰীকৃষ্ণ কাল্পনিক নহে । বৈষ্ণবের রাধা, তঁহাদের জীবনের প্রাণের মৰ্ম্মে শতদলের উপরই প্ৰতিষ্ঠিত। এই যুগল রূপই বাঙ্গলার সভ্যতা, সাধনা, শিক্ষা, দীক্ষার মধ্যে শত শত বিচিত্ররূপে প্ৰকাশিত করিয়াছে । যাহারা বাঙ্গলার প্রাণ, যাহারা বঙ্গলার প্রাণকেন্দ্ৰ হইতে ইউরোপীয় বিশ্বসাহিত্যের ঝড়ে শতধা দীর্ণ ও বিচ্ছিন্ন, তঁাহারাই এই বিশাল বিশ্বলীলার জীবন্ত মূৰ্ত্তি-স্রোতের মাঝে বৈষ্ণব কবিতাকে প্ৰাণহীন রূপক বলিয়া উড়াইয়া দিতে চাহেন। কৃষ্ণ যদি বাস্তবিকই কৃষ্ণ পাওয়াইয়া দেন, তবে ত এ জী এনকে ধন্য মনে করি। কৃষ্ণ বাস্তবিকই বৈষ্ণব পদাবলীর মহাজনাদিগকে কৃষ্ণ পাওয়াইয়া দিয়াছিলেন, তাই তঁহাদের কবিতা এত সরল, এত সুন্দর, এত রূপ-বৈচিত্র্যে ভর-ভরা । এই সব কবিতা বুঝিতে হইলে ইউরোপীয় সাহিত্যের মোহ হইতে আপনাকে মুক্ত করিতে হইবে । বাঙ্গলার যে প্ৰাণ, তাহার খোজ করিতে হইবে, মুখস্থ করা জ্ঞানের ষে অহঙ্কার, তাহাকে দূর করিয়া দিতে হইবে। বাঙ্গলাদেশকে নূতন করিয়া বৈষ্ণব হইতে হইবে না। বাঙ্গল ষে প্ৰাণে বৈষ্ণব। বাঙ্গলার স্বাভাবিক শক্তি, তাহারই তপস্যা করিতে হইবে। তোমাদের ইহাই বলিতে চাই, শ্ৰীকৃষ্ণ রূপক নয়। ভারতবর্ষের ইতিহাসে, ভারতসভ্যতার ইতিহাসে, হিন্দুর জাতীয় গরিমার ইতিহাসে, তাহারা স্থান অতি-অতি-উৰ্দ্ধে, সেই আদর্শ মহাপুরুষকে শ্ৰীভগবান বলিয়া ভারত-আপামর সাধারণ মানিয়া আসিতেছে, তাহার লীলার মধ্য দিয়া ভারত সমাজ, ধৰ্ম্ম, সভ্যতা অঙ্গাঙ্গিযোগে যুক্ততঁহারই লীলার মহাভাবে পুষ্ট ভারতের কাছে ইহা রূপক নয়, বাঙ্গলার কাছে ইহা রূপক নয়, ইহা ঐতিহাসিক সত্য। শুধু ঐতিহাসিক নয়,