কাপড় পরে এসে গো। শীগ্গির যাও, খুব শীগ্গির ফিরে এসো কিন্তু, ওই নিয়ে সাতজন্ম লেগে থেকো না বুঝলে?”
সুনীতির এতক্ষণে মনে পড়িল, সত্য সত্যই সে নিজের কথা সম্পূর্ণরূপেই ভুলিয়া গিয়াছিল, সারাদিন ধরিয়া ঘর-দোরের ঝুলঝাড়া হইতে রাঁধাবাড়া পর্য্যন্ত করিয়া যে মূর্ত্তি তার এখন হইয়াছে, এই বেশভূষার সঙ্গে ঐ টোকা’ মাথা ও ঝুলকালি মাখা হাত-মুখ যে কোন লোকের সাক্ষাতেই বাহির করার মতন নয়! চট্ করিয়া তার মনে পড়িয়া গেল, সকাল বেলার সেই শুভ-সন্দেশবাহী সুশ্রী চেহারার যুবকটিকে। তার সাক্ষাতে সকালে যা হইয়াছে সেই তো যথেষ্ট, এ মূর্ত্তি লইয়া আবারও সে বাহির হইতে চাহে না। জীবনের বিষম ঘুর্ণীপাকে পাক খাইতে খাইতে যদিও তার জীবনের মধ্যে একমাত্র বজ্র-বিদ্যুৎ-ভরা মেঘাচ্ছন্ন বর্ষা ঋতু ভিন্ন অন্য কাহারও প্রবেশ পথ ছিল না, কিন্তু কালের ধর্ম্ম তো আর কোনই বাধা মানে না,—পথ না পাইলেও সে যে অবসরের প্রতীক্ষায় পথপ্রান্তে অপেক্ষা করিয়া উন্মুখ হইয়া থাকে। সহৃদয় সেই তরুণকে তরুণী হইয়া অন্ততঃ নির্লিপ্ততার দ্বারা অবমাননা সে কোনমতেই তো করিতে পারে না।
যখন সে সাজসজ্জা করিয়া ঘরে ঢুকিল, চন্দ্রকুমার একটু অগ্রসর হইয়া আসিয়া সপ্রশংস বিস্ময়ে তাহাকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে দেখিতে মৃদু মৃদু হাসিয়া এইটুকু মাত্র বলিলেন—
“নাঃ, তোমার চেহারা যতটা খারাপ হয়ে গেছে মনে করি, ততটা হয়নি। অবশ্য সুকুমারী ঠিকই ধরে ফেলবে!”