পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫১২ গল্পগুচ্ছ হইতে মাছিয়া ফেলিবার চেষ্টা করিয়াছে। হরকুমারবাবা কুড়ানির সন্ধানে পলিসে খবর দিলেন। সেবারে প্লেগ-দমনের বিভীষিকায় এত লোক এত দিকে পলায়ন করিতেছিল যে, সেই-সকল পলাতকদলের মধ্য হইতে একটি বিশেষ লোককে বাছিয়া লওয়া পলিসের পক্ষে শস্ত হইল। হরকুমারবাব দুই-চারিবার ভুল লোকের সন্ধানে অনেক দুঃখ এবং লজা পাইয়া কুড়ানির আশা পরিত্যাগ করিলেন। অজ্ঞাতের কোল হইতে তাঁহারা যাহাকে পাইয়াছিলেন অজ্ঞাতের কোলের মধ্যেই সে আবার লুকাইয়া পড়িল। যতীন বিশেষ চেষ্টা করিয়া সেবার পেলগ-হাসপাতালে ডাক্তারি-পদ গ্রহণ করিয়াছিল। একদিন দপারবেলায় বাসায় আহার সারিয়া হাসপাতালে আসিয়া সে শনিল, হাসপাতালের সী-বিভাগে একটি নতন রোগিণী আসিয়াছে। পলিস তাহাকে পথ হইতে কুড়াইয়া আনিয়াছে। যতীন তাহাকে দেখিতে গেল। মেয়েটির মাখের অধিকাংশ চাদরে ঢাকা ছিল। যতীন প্রথমেই তাহার হাত তুলিয়া লইয়া নাড়ী দেখিল। নাড়ীতে জর অধিক নাই, কিন্তু দাবলতা অত্যন্ত। তখন পরীক্ষার জন্য মুখের চাদর সরাইয়া দেখিল, সেই কুড়ানি । ইতিমধ্যে পটলের কাছ হইতে যতীন কুড়ানির সমস্ত বিবরণ জানিয়াছিল। অব্যন্ত ধ্যানদটির উপরে কেবলই আশ্রহেীন কাতরতা বিকীর্ণ করিয়াছে। আজ সেই রোগনিমলিত চক্ষর সন্দীঘ পল্লব কুড়ানির শীর্ণ কপোলের উপরে কালিমার রেখা টানিয়াছে; দেখিবামার যতীনের বকের ভিতরটা হঠাৎ কে যেন চাপিয়া ধরিল। এই একটি মেয়েকে বিধাতা এত যত্নে ফলের মতো সংকুমার করিয়া গড়িয়া দভিক্ষ হইতে মারীর মধ্যে ভাসাইয়া দিলেন কেন। আজ এই-যে পেলব প্রাণটি ক্লিটে হইয়া বিছানার উপরে পড়িয়া আছে, ইহার এই অলপ কয়দিনের আয়র মধ্যে এত বিপদের আঘাত, এত বেদনার ভার সহিল কী করিয়া, ধরিল কোথায়। যতীনই-বা ইহার জীবনের মাঝখানে তৃতীয় আর-একটি সংকটের মতো কোথা হইতে আসিয়া জড়াইয়া পড়িল । রন্ধ দীঘনিশ্বাস যতীনের বক্ষোবারে আঘাত করিতে লাগিল—কিন্তু সেই আঘাতের তাড়নায় তাহার হৃদয়ের তারে একটা সখের মীড়ও বাজিয়া উঠিল। যে ভালোবাসা জগতে দলভি, যতীন তাহা না চাহিতেই, ফাগানের একটি মধ্যাহ্নে একটি পণবিকশিত মাধবীমঞ্জরির মতো অকস্মাৎ তার পায়ের কাছে আপনি আসিয়া খসিয়া পড়িয়াছে। ষে ভালোবাসা এমন করিয়া মৃত্যুর দুবার পর্যন্ত আসিয়া মছিত হইয়া পড়ে, পথিবীতে কোন লোক সেই দেবভোগ্য নৈবেদ্যলাভের অধিকারী। যতীন কুড়ানির পাশে বসিয়া তাহাকে অলপ অলপ গরম দুধ খাওয়াইয়া দিতে । লাগিল। খাইতে খাইতে অনেকক্ষণ পরে সে দীঘনিশ্বাস ফেলিয়া চোখ মেলিল। যতীনের মথের দিকে চাহিয়া তাহাকে সদরে সবনের মতো যেন মনে করিয়া লইতে চেষ্টা করিল। যতীন যখন তাহার কপালে হাত রাখিয়া একটখানি নাড়া দিয়া কহিল “কুড়ানি” তখন তাহার অজ্ঞানের শেষ ঘোরটুকু হঠাৎ ভাঙিয়া গেল— যতীনকে সে চিনিল এবং তখনই তাহার চোখের উপরে বাপকোমল আর-একটি মোহের আবরণ