পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>Obf গল্পগুচ্ছ সবণমাগ আদ্যানাথ এবং বৈদ্যনাথ চক্লবতী দুই শরিক। উভয়ের মধ্যে বৈদ্যনাথের অবস্থাই কিছ খারাপ। বৈদ্যনাথের বাপ মহেশচন্দ্রের বিষয়বধি আদৌ ছিল না, তিনি দাদা শিবনাথের উপর সম্পণে নিভীর করিয়া থাকিতেন। শিবনাথ ভাইকে প্রচুর সেনহবাক্য দিয়া তৎপরিবতে' তাঁহার বিষয়সম্পত্তি সমস্ত আত্মসাৎ করিয়া লন। কেবল খানকতক কোম্পানির কাগজ অবশিষ্ট থাকে। জীবনসমুদ্রে সেই কাগজ-কখানি বৈদ্যনাথের একমাত্র অবলম্ববন। শিবনাথ বহন অনুসন্ধানে তাঁহার পত্র আদ্যানাথের সহিত এক ধনীর একমাত্র কন্যার বিবাহ দিয়া বিষয়বধির আর-একটি সংযোগ করিয়া রাখিয়াছিলেন। মহেশচন্দ্র একটি সপ্তকন্যাভারগ্রস্ত দরিদ্র ব্রাহণের প্রতি দয়া করিয়া এক পয়সা পণ না লইয়া তাহার জ্যেষ্ঠা কন্যাটির সহিত পত্রের বিবাহ দেন। সাতটি কন্যাকেই যে ঘরে লন নাই তাহার কারণ, তাঁহার একটিমাত্র পত্র এবং ব্রাহরণও সেরাপ অনুরোধ করে নাই। তবে, তাহাদের বিবাহের উদ্দেশে সাধ্যাতিরিক্ত অর্থসাহায্য করিয়াছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর বৈদ্যনাথ তাঁহার কাগজ-কয়খানি লইয়া সম্পণে নিশিচন্ত ও সন্তুষ্টচিত্তে ছিলেন। কাজকমের কথা তাঁহার মনেও উদয় হইত না। কাজের মধ্যে তিনি গাছের ডাল কাটিয়া বসিয়া বসিয়া বহী যত্নে ছড়ি তৈরি করিতেন। রাজ্যের বালক এবং যবেকগণ তাঁহার নিকট ছড়ির জন্য উমেদার হইত, তিনি দান করিতেন। ইহা ছাড়া বদান্যতার উত্তেজনায় ছিপ ঘড়ি লাটাই নিমাণ করিতেও তাঁহার বিস্তর সময় যাইত। যাহাতে বহযেত্নে বহুকাল ধরিয়া চাঁচাছোলার আবশ্যক, অথচ সংসারের উপকারিতা দেখিলে যাহা সে পরিমাণ পরিশ্রম ও কালব্যয়ের অযোগ্য, এমন একটা হাতের কাজ পাইলে তাঁহার উৎসাহের সীমা থাকে না। পাড়ায় যখন দলাদলি এবং চক্লান্ত লইয়া বড়ো বড়ো পবিত্র বঙ্গীয় চণ্ডীমন্ডপ ধমাচ্ছন্ন হইয়া উঠিতেছে, তখন বৈদ্যনাথ একটি কলম-কাটা ছরি এবং একখণ্ড গাছের ডাল লইয়া প্রাতঃকাল হইতে মধ্যাহ্ন এবং আহার ও নিদ্রার পর হইতে সায়াহকাল পর্যন্ত নিজের দাওয়াটিতে একাকী অতিবাহিত করিতেছেন, এমন প্রায় দেখা যাইত। ষষ্ঠীর প্রসাদে শত্রর মুখে যথাক্ৰমে ছাই দিয়া বৈদ্যুনাথের দুইটি পত্র এবং একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করিল। গহিণী মোক্ষদাসুন্দরীর অসন্তোষ প্রতিদিন বাড়িয়া উঠিতেছে। আদ্যানাথের ঘরে যেরপে সমারোহ বৈদ্যনাথের ঘরে কেন সেরাপ না হয়। ও বাড়ির বিন্ধ্যবাসিনীর যেমন গহনাপত্র, বেনারসী শাড়ি, কথাবাতার ভঙ্গী এবং চাল-চলনের গৌরব, মোক্ষদার যে ঠিক তেমনটা হইয়া ওঠে না, ইহা অপেক্ষা যক্তিবিরদ্ধে ব্যাপার আর কী হইতে পারে। অথচ, একই তো পরিবার। ভাইয়ের বিষয় বঞ্চনা করিয়া লইয়াই তো উহাদের এত উন্নতি। যত শোনে ততই মোক্ষদার হাদয়ে নিজ শবশরের প্রতি এবং শবশরের একমাত্র পত্রের প্রতি আশ্রমধা এবং অবজ্ঞা আর ধরে না। নিজগহের কিছুই তাঁহার ভালো