পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3OO গল্পগুচ্ছ এবং ইহাই সংগত। তাহার দচিন্তা সতীব্র হইয়া উঠিল। সংসারে তাহার সন্তান নাই; স্বামী আছে বটে কিন্তু স্বামীর অস্তিত্ব সে অন্তরের মধ্যে অনুভব করে না, অতএব যাহা তাহার একমাত্র যত্নের ধন, যাহা তাহার ছেলের মতো ক্ৰমে ক্ৰমে বৎসরে বৎসরে বাড়িয়া উঠিতেছে, যাহা রপেকমাত্র নহে, যাহা প্রকৃতই সোনা, যাহা মানিক, যাহা বক্ষের, যাহা কণ্ঠের, যাহা মাথার—সেই অনেক দিনের অনেক সাধের সামগ্রী এক মহতেই ব্যবসায়ের অতলপশ গহবরের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হইবে, ইহা কল্পনা করিয়া তাহার সব শরীর হিম হইয়া আসিল। সে কহিল, "কী করা যায়।’ মধ্যসদন কহিল, গহনাগুলো লইয়া এইবেলা বাপের বাড়ি চলো। গহনার কিছ অংশ, এমনকি অধিকাংশই যে তাহার ভাগে আসিবে বন্ধিমান মধ্য মনে মনে তাহার উপায় ঠাওরাইল । মণিমালিকা এ প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ সম্মত হইল। আষাঢ়শেষের সন্ধ্যাবেলায় এই ঘাটের ধারে একখানি নৌকা আসিয়া লাগিল । ঘনমেঘাচ্ছন্ন প্রত্যুষে নিবিড় অন্ধকারে নিদ্রাহীন ভেকের কলরবের মধ্যে একখানি মোটা চাদরে পা হইতে মাথা পৰ্যন্ত আবত করিয়া মণিমালিকা নৌকায় উঠিল। মধ্যসদন নৌকার মধ্য হইতে জাগিয়া উঠিয়া কহিল, গহনার বাক্সটা আমার কাছে দাও।” মণি কহিল, সে পরে হইবে, এখন নৌকা খালিয়া দাও।” নৌকা খলিয়া দিল, খরস্রোতে হহেন করিয়া ভাসিয়া গেল। মণিমালিকা সমস্ত রাত ধরিয়া একটি একটি করিয়া তাহার সমস্ত গহনা সব গ ভরিয়া পরিয়াছে, মাথা হইতে পা পর্যন্ত আর সস্থান ছিল না। বাক্সে করিয়া গহনা লইলে সে বাক্স হাতছাড়া হইয়া যাইতে পারে, এ আশঙ্কা তাহার ছিল। কিন্তু গায়ে পরিয়া গেলে তাহাকে না বধ করিয়া সে গহনা কেহ লইতে পারিবে না। সঙ্গে কোনোপ্রকার বাক্স না দেখিয়া মধ্যসদন কিছু বুঝিতে পারিল না, মোটা চাদরের নীচে যে মণিমালিকার দেহপ্রাণের সঙ্গে সঙ্গে দেহপ্রাণের অধিক গহনাগুলি আচ্ছন্ন ছিল তাহা সে অনুমান করিতে পারে নাই। মণিমালিকা ফণিভূষণকে বঞ্চিত না বটে কিন্তু মধ্যসদনকে চিনিতে তাহাব বাকি ছিল না। মধসদন গোমস্তার কাছে একখানা চিঠি রাখিয়া গেল যে, সে কয়ীকে পিন্যালয়ে পোছাইয়া দিতে রওনা হইল। গোমস্তা ফণিভূষণের বাপের আমলের ; সে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া হস্ব-ইকারকে দীঘ-ঈকার এবং দন্তা-স’কে তালব্য-শ করিয়া মানবকে এক পত্র লিখিল ভালো বাংলা লিখিল না কিন্তু স্ত্রীকে অযথা প্রশ্রয় দেওয়া যে পরে ষোচিত নহে, এ কথাটা ঠিকমতই প্রকাশ করিল। ফণিভূষণ মণিমালিকার মনের কথাটা ঠিক ককিল। তাহার মনে এই আঘাতটা প্রবল হইল যে, আমি গরতের ক্ষতিসম্ভাবনা সত্ত্বেও সন্ত্রীর অলংকার পরিত্যাগ করিয়া ੋਂ ਵਾਰਾਂ ਵਾਂ 召目 নিজের প্রতি যে নিদারণ অন্যায়ে কন্ধ হওয়া উচিত ছিল, ফণিভূষণ তাহাতে ক্ষন্ধে হইল মাত্র। পরষমানুষ বিধাতার ন্যায়দণ্ড, তাহার মধ্যে তিনি যজ্ঞানি নিহিত করিয়া রাখিয়াছেন, নিজের প্রতি অথবা অপরের প্রতি অন্যায়ের সংঘর্ষে সে যদি দপ করিয়া জনলিয়া উঠিতে না পারে তবে ধিক তাহাকে। পরবমানব দাবানির মতো