পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নষ্টনীড় 8ᏌᎼ কেন হইতেছে। অমল আমার এতই কী যে তাহার জন্য এত দুঃখ ভোগ করিব। আমার কী হইল, এতদিন পরে আমার এ কী হইল। দাসী চাকর রাস্তার মটেমজরগলোও নিশ্চিন্ত হইয়া ফিরিতেছে, আমার এমন হইল কেন। ভগবান হরি, আমাকে এমন বিপদে কেন ফেলিলে।” কেবলই প্রশ্ন করে এবং আশ্চর্য হয়, কিন্তু দুঃখের কোনো উপশম হয় না। অমলের সমতিতে তাহার অন্তর-বাহির এমনি পরিব্যাপ্ত যে, কোথাও সে পালাইবার সখান পায় না ! ভূপতি কোথায় অমলের সমতির আক্ৰমণ হইতে তাহাকে রক্ষা করিবে, তাহা না করিয়া সেই বিচ্ছেদব্যথিত স্নেহশীল মড়ে কেবলই অমলের কথাই মনে করাইয়া দেয়। অবশেষে চার একেবারে হাল ছাড়িয়া দিল, নিজের সঙ্গে যন্ধে করার ক্ষাত হইল; হার মানিয়া নিজের অবস্থাকে অবিরোধে গ্রহণ করিল। অমলের সমতিকে যত্নপবেক হৃদয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়া লইল । ক্ৰমে এমনি হইয়া উঠিল, একাগ্রচিত্তে অমলের ধ্যান তাহার গোপন গবের বিষয় হইল— সেই সমতিই যেন তাহার জীবনের শ্রেষ্ঠ গৌরব। গহকায্যের অবকাশে একটা সময় সে নিদিষ্ট করিয়া লইল । সেই সময় নিজনে গহবার রন্ধ করিয়া তন্ন তন্ন করিয়া অমলের সহিত তাহার নিজ জীবনের প্রত্যেক ঘটনা চিন্তা করিত। উপড়ে হইয়া পড়িয়া বালিশের উপর মুখ রাখিয়া বারবার করিয়া বলিত, “অমল, অমল, অমল!” সমদ্র পার হইয়া যেন শব্দ আসিত, “বোঠান, কী বোঠান।” চার সিন্ত চক্ষ মাদ্রিত করিয়া বলিত, “অমল, তুমি রাগ করিয়া চলিয়া গেলে কেন। আমি তো কোনো দোষ করি নাই। তুমি যদি ভালেমখে বিদায় লইয়া যাইতে তাহা হইলে বোধ হয় আমি এত দুঃখ পাইতাম না।” অমল সমুখে থাকিলে যেমন কথা হইত চার ঠিক তেমনি করিয়া কথাগুলি উচ্চারণ করিয়া বলিত, “অমল, তোমাকে আমি একদিনও ভুলি নাই। একদিনও না, একদণ্ডও না। আমার জীবনের পজা করিব।” এইরুপে চার তাহার সমস্ত ঘরকন্না, তাহার সমস্ত কতব্যের অন্তঃস্তরের তলদেশে সড়ঙ্গ খনন করিয়া সেই নিরালোক নিস্তৰ অন্ধকারের মধ্যে আশ্রমালাসজিত একটি গোপন শোকের মন্দির নিমাণ করিয়া রাখিল। সেখানে তাহার স্বামী বা পথিবীর আর-কাহারও কোনো অধিকার রহিল না। সেই স্থানটুকু যেমন গোপনতম, তেমনি গভীরতম, তেমনি প্রিয়তম । তাহারই বারে সে সংসারের সমন্সত ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করিয়া নিজের অনাবত আত্মস্বরপে প্রবেশ করে এবং সেখান হইতে বাহির হইয়া মুখোষখানা আবার মাখে দিয়া পথিবীর হাস্যালাপ ও ক্রিয়াকমের রঙ্গভূমির মধ্যে আসিয়া উপস্থিত হয়। ষোড়শ পরিচ্ছেদ এইরপে মনের সহিত বন্দ্ৰবিবাদ ত্যাগ করিয়া চার তাহার বহৎ বিষাদের মধ্যে একপ্রকার শান্তিলাভ করিল এবং একনিষ্ঠ হইয়া স্বামীকে ভক্তি ও যত্ন করিতে