পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

や > 0 গল্পগুচ্ছ বলিলেন, "তোমরা যেমন ভালো বোঝ তাই করো।" রাসমণির কাছে চিঠি গেল; তিনি তাড়াতাড়ি বগলাচরণকে সঙ্গে করিয়া কলিকাতায় আসিলেন। সন্ধ্যার সময় কলিকাতায় পৌছিয়া তিনি কেবল কয়েক ঘণ্টামাত্র কালীপদকে জীবিত দেখিয়াছিলেন। বিকারের অবস্থায় সে রহিয়া রহিয়া মাকে ডাকিয়াছিল—সেই ধননিগলি তাঁহার বকে বিধিয়া রহিল। ভবানীচরণ এই আঘাত সহিয়া ষে কেমন করিয়া বাঁচিয়া থাকিবেন সেই ভয়ে রাসমণি নিজের শোককে ভালো করিয়া প্রকাশ করিবার আর অবসর পাইলেন না-- তাঁহার পত্র আবার তাঁহার স্বামীর মধ্যে গিয়া বিলীন হইল— স্বামীর মধ্যে আবার দইজনেরই ভার তাঁহার ব্যথিত হৃদয়ের উপর তিনি তুলিয়া লইলেন। তাঁহার প্রাণ বলিল, আর আমার সয় না। তব তাঁহাকে সহিতেই হইল । 6: রাত্রি তখন অনেক ! গভীর শোকের একান্ত ক্লান্তিতে কেবল ক্ষণকালের জন্য বাসমণি অচেতন হইয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছিলেন। কিন্তু, ভবানীচরণের ঘমে হইতেছিল না । কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ-ওপাশ করিয়া অবশেষে দীর্ঘনিশবাস-সহকাবে দয়াময় হরি বলিয়া উঠিয়া পড়িয়াছেন। কালীপদ যখন গ্রামের নিদ্যালয়েই পড়িত, যখন সে কলিকাতায় যায় নাই, তখন সে যে-একটি কোণের ঘরে বসিযা পড়াশুনা কবিত ভবানীচরণ কম্পিত হস্তে একটি প্রদীপ ধরিয়া সেই শলাঘরে প্রবেশ করিলেন । রাসমণির হাতে চিত্র করা ছিন্ন কাঁথাটি এখনো তত্তাপোশের উপর পাতা আছে, তহাস নানা পথানে এখনো সেই কালির দাগ রহিয়াছে ; মলিন দেয়ালের গায়ে কয়লায় তা কা সেই জ্যামিতির রেখাগুলি দেখা যাইতেছে ; তক্তাপোশের এক কোণে কতকগুলি হ তবাঁধা ময়লা কাগজের খাতার সঙ্গে তৃতীয়খন্ড রযাল-রীডারের ছিন্নাবশেষ অক্তি ও পড়িয়া আছে । আর— হায় হায়— তার ছেলেবয়সের ছোটো পায়ের একপাটি চটি ষে ঘরের কোণে পড়িয়া ছিল, তাহা এতদিন কেহ দেখিয়াও দেখে নাই, আজ তাহা সকলের চেয়ে বড়ো হইয়া চোখে দেখা দিল— জগতে এমন কোনো মহৎ সামগ্রী নাই যাহা আজি ঐ ছোটো জাতাটিকে আড়াল করিয়া রাখিতে পারে। কুলুঙ্গিতে প্রদীপটি রাখিয়া ভবানীচরণ সেই তক্তাপোশের উপর আসিয়া বসিলেন। তাঁহার শাক চোখে জল আসিল না, কিন্তু তাঁহার বকের মধ্যে কেমন করিতে লাগিল— যথেষ্ট পরিমাণে নিশবাস লইতে তাঁহার পঞ্জির যেন ফাটিয়া যাইতে চাহিল। ঘরের পাবদিকের দরজা খালিয়া দিয়া গরাদে ধরিয়া তিনি বাহিরের দিকে চাহিলেন । অন্ধকার রাত্রি, টিপ টিপ করিয়া ব্যষ্টি পড়িতেছে। সম্মখে প্রাচীরবেষ্টিত ঘন জঙ্গল। তাহার মধ্যে ঠিক পড়িবার ঘরের সামনে একটুখানি জমিতে কালীপদ বাগান করিয়া তুলিবার চেষ্টা করিয়াছিল। এখনো তাহার স্বহস্তে রোপিত ঝমকা-লতা কষ্টির বেড়ার উপর প্রচুর পল্লব বিস্তার করিয়া সজীব আছে— তাহা ফলে ফলে ভরিয়া গিয়াছে। আজ সেই বালকের যত্নপালিত বাগানের দিকে চাহিয়া তাঁহার প্রাণ যেন কণ্ঠের