পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

á总 গল্পগুচ্ছ নিতাই এই নতন রহস্য-আবিকারের আশ্বাসে উৎফুল্ল হইয়া উঠিল। বাপ অকৃতকাষ হইয়া চলিয়া গেলেই বালকদের সঙ্গে বাজি রাখিয়া একটা লকেচুরি খেলিতে হইবে, এইরুপ মনে মনে সংকল্প করিল। কেহ খাজিয়া পাইবে না। ভারি মজা। বাপ আসিয়া সমস্ত দেশ খ:জিয়া কোথাও তাহার সন্ধান পাইবে না, সেও খবে কৌতুক। মধ্যাহ্নে যজ্ঞনাথ বালককে গহে রাধ করিষা কোথায় বাহির হইয়া গেলেন। ফিরিয়া আসিলে নিতাই তাঁহাকে প্রশ্ন করিয়া করিয়া অস্থির করিয়া তুলিল । সন্ধ্যা হইতে না হইতে বলিল, “চলো ।” যজ্ঞনাথ বলিলেন, “এখনো রাত্রি হয় নাই।” নিতাই আবার কহিল, “রাত্রি হইয়াছে দাদা, চলো।” যজ্ঞনাথ কহিলেন, “এখনো পাড়ার লোক ঘমেয় নাই।” নিতাই মাহত অপেক্ষা করিয়াই কহিল, "এখন ঘুমাইয়াছে চলো।” রাত্রি বাড়িতে লাগিল। নিদ্রাতুর নিতাই বহ কটে নিদ্রাসবরণের প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও বসিয়া বসিয়া ঢালিতে আরম্ভ করিল। রাত্রি দুই প্রহর হইলে যজ্ঞনাথ নিতাইয়ের হাত ধরিয়া নিদ্রিত গ্রামের অন্ধকার পথে বাহির হইলেন । আর-কোনো শব্দ নাই, কেবল থাকিয়া থাকিয়া কুকুর ঘেউ-ঘেউ করিয়া ডাকিয়া উঠিল, এবং সেই শব্দে নিকটে এবং দরে যতগলা কুকুর ছিল সকলে তারস্বরে যোগ দিল। মাঝে-মাঝে নিশাচর পক্ষী পদশব্দে সেত হইয়া ঝটপট করিয়া বনের মধ্য দিয়া উড়িয়া গেল। নিতাই ভয়ে যজ্ঞনাথের হাত দঢ় করিয়া ধরিল। অনেক মাঠ ভাঙিয়া অবশেষে এক জঙ্গলের মধ্যে এক দেবতাহীন ভাঙা মন্দিরে উভয়ে গিয়া উপস্থিত হইল। নিতাই কিঞ্চিং ক্ষণস্বর কহিল, “এইখানে ?” ষেরুপ মনে করিয়াছিল সেরাপ কিছুই নয়। ইহার মধ্যে তেমন রহস্য নাই । পিতৃগহ-ত্যাগের পর এমন পোড়ো মন্দিরে তাহাকে মাঝে মাঝে রাত্রিযাপন করিতে হইয়াছে। স্থানটা যদিও লকোচুরি খেলার পক্ষে মন্দ নয়, কিন্তু তব এখান হইতে সন্ধান করিয়া বাহির করা নিতান্ত অসম্ভব নহে । যজ্ঞনাথ মন্দিরের মধ্য হইতে একখন্ড পাথর উঠাইয়া ফেলিলেন । বালক দেখিল, নিম্নে একটা ঘরের মতো, এবং সেখানে প্রদীপ জনলিতেছে। দেখিয়া অত্যন্ত বিসময় এবং কৌতুহল হইল, সেইসঙ্গে ভয়ও করিতে লাগিল। একটি মই বাহিয়া যজ্ঞনাথ নামিয়া গেলেন, তাঁহার পশ্চাতে নিতাইও ভয়ে ভয়ে নামিল। নীচে গিয়া দেখিল, চারি দিকে পিতলের কলস ; মধ্যে একটি আসন এবং তাহার সম্মখে সিদর, চন্দন, ফলের মালা, পঙ্গার উপকরণ। বালক কৌতুহলনিবত্তি করিতে গিয়া দেখিল, ঘড়ায় কেবল টাকা এবং মোহর । দিব। আমার অধিক কিছু নাই, সবে এই-কটিমাত্র ঘড়া আমার সবল। আজ আমি ইহার সমস্তই তোমার হাতে দিব।” বালক লাফাইয়া উঠিয়া কহিল, “সমস্তষ্ট ? ইহার একটি টাকাও তুমি লইবে না?” “যদি লই তবে আমার হাতে যেন কৃষ্ঠ হয়। কিন্তু, একটা কথা আছে। যদি কখনো আমার নিরদেশ নাতি গোকুলচন্দ্র কিবা তাহার ছেলে কিবা তাহার পৌর