পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তপস্বিনী Գ Հ> কিছুই শক্ত নয়, কিন্তু লোকের কাছে এই অপমানের সে কী কৈফিয়ত দিবে। অবশেষে অনেক চিন্তার পর একদিন ভোরবেলায় তার মাথায় আসিল, এ সংসারে মৃত্যু ছাড়া আর-একটা পথ খোলা আছে যেটা বি.এ. পাসের অধীন নয় এবং যেটাতে দারা সতে ধন জন সম্পণ অনাবশ্যক। সে আর কিছ নয়, সন্ন্যাসী হওয়া । এই চিন্তাটার উপর কিছুদিন ধরিয়া গোপনে সে বিস্তর সিগারেটের ধোঁয়া লাগাইল, তার পর একদিন দেখা গেল স্কুলঘরে মেঝের উপর তার কী-বইয়ের ছোড়া টুকরোগলো পরীক্ষাদ্বগের ভগ্নাবশেষের মতো ছড়ানো পড়িয়া আছে—পরীক্ষাথীর দেখা নাই। টেবিলের উপর এক-টকরা কাগজ ভাঙা কাঁচের গেলাস দিয়া চাপা, তাহাতে লেখা— “আমি সন্ন্যাসী— আমার আর গাড়ির দরকার হইবে না। শ্ৰীষত্তে বরদানন্দস্বামী।" মাখনবাব কিছুদিন কোনো খোঁজই করিলেন না। তিনি ভাবিলেন, বরদাকে নিজের গরজেই ফিরিতে হইবে, খাঁচার দরজা খোলা রাখা ছাড়া আর-কোনো আয়োজনের দরকার নাই। দরজা খোলাই রহিল কেবল সেই কী-বইগলার ছোড়া টকরা সাফ হইয়া গেছে—আর-সমস্তই ঠিক আছে। ঘরের কোণে সেই জলের কুজার উপরে কনা-ভাঙা গেলাসটা উপড়ে করা; তেলের-দাগে-মলিন চৌকিটার আসনের জায়গায় ছারপোকার উৎপাত ও জীণতার হলটি-মোচনের জন্য একটা পরাতন এটলাসের মলাট পাতা; এক ধারে একটা শান্য প্যাকবাক্সের উপর একটা টিনের তোরগে বরদার নাম অাঁকা ; দেয়ালের গায়ে তাকের উপর একটা মলাট-ছোড়া ইংরেজি-বাংলা ডিক্সনারি, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ভারতবষের ইতিহাসের কতকগলো পাতা, এবং মলাটে রানী ভিক্টোরিয়ার মুখ-অাঁকা অনেকগুলো এক্সেসাইজ বই। এই খাতা ঝাড়িয়া দেখিলে ইহার অধিকাংশ হইতে অগডেন কোম্পানির সিগারেট-বাক্স-বাহিনী বিলাতি নটীদের মতি ঝরিয়া পড়িবে। সন্ন্যাস-আশ্রয়ের সময় পথের সাম্প্রনার জন্য এগুলো যে বরদা সঙ্গে লয় নাই তাহা হইতে বঝো যাইবে তার মন প্রকৃতিস্থ ছিল না। আমাদের নায়কের তো এই দশা ; নায়িকা ষোড়শী তখন সবেমাত্র রয়োদশী। বাড়িতে শেষ পর্যন্ত সবাই তাকে খাকি বলিয়া ডাকিত, শ্বশুরবাড়িতেও সে আপনার এই চিরশৈশবের খ্যাতি লইয়া আসিয়াছিল, এইজন্য তার সামনেই বরদার চরিত্র-সমালোচনায় বাড়ির দাসীগুলোর পর্যন্ত বাধিত না। শাশুড়ি ছিলেন চিররগণা— কতার কোনো বিধানের উপরে কোনো কথা বলিবার শক্তি তাঁর ছিল না, এমনকি, মনে করিতেও তাঁর ভয় করিত। পিস শাশুড়ির ভাষা ছিল খাব প্রখর ; বরদাকে লইয়া তিনি খুব শক্ত শস্ত কথা খাব চোখা চোখা করিয়া বলিতেন, তার বিশেষ একট কারণ ছিল। পিতামহদের আমল হইতে কৌলীনোর অপদেবতার কাছে বংশের মেয়েদের বলি দেওয়া এ বাড়ির একটা প্রথা। এই পিসি যার ভাগে পড়িয়াছিলেন সে একটা প্রচণ্ড গাঁজাখোর। তার গণের মধ্যে এই যে, সে বেশিদিন বাঁচে নাই। তাই আদর করিয়া ষোড়শীকে তিনি যখন মতোহারের সঙ্গে তুলনা করিতেন তখন অন্তৰামী বকিতেন, ব্যথ মতোহারের জন্য যে আক্ষেপ সে একা ষোড়শীকে লইয়া নয়। এ ক্ষেত্রে মজাহারের যে বেদনাবোধ আছে সে কথা সকলে ভুলিয়াছিল। পিসি