পাতা:গীতবিতান.djvu/১১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০১৮
গীতবিতান

রবীন্দ্রসংগীতের ধাহারা বিশেষ চর্চা করেন তাহারা সকলেই জানেন যে, পূর্বপ্রচলিত বিলাতি বা বৈঠকি গানের অথবা লোকসংগীতের আত্মীকরণ এবং প্রথম জীবনের কিছু রচনায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সুরসংযোজন —ইহা ছাড়া রবীন্দ্রনাথের নামে প্রচারিত প্রায় সব গানের সুরস্রষ্টাও রবীন্দ্রনাথ। কৈশোরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সাহচর্যে ও উৎসাহদানে কবি কীভাবে গীতিরচনায় প্রবৃত্ত হন সে সম্পর্কে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনতি হইতে আমরা অনেক কথা জানিতে পারি। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘সরোজিনী নাটকের জন্য ‘অল চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ গানটি রবীন্দ্রনাথ কী ভাবে রচনা করেন তাহ পূর্বেই (পৃ ৯৮১) বলা হইয়াছে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কথায় আরও জানিতে পারি

 সরোজিনী-প্রকাশের পর হইতেই, আমরা রবিকে প্রমোশ দিয়া আমাদের সমশ্রেণীতে উঠাইয়া লইলাম। এখন হইতে সঙ্গীত ও সাহিত্যচর্চাতে আমরা হইলাম তিনজন অক্ষয় (চৌধুরী), ববি ও আমি। ••• ••• এই সময়ে আমি পিয়ানো বাজাইয়া নানাবিধ সুর রচনা করিতাম। আমার দুই পার্শ্বে অক্ষয়চন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ কাগজ পেন্সিল লইয়া বসিতেন। আমি যেমনি একটি সুর-রচনা করিলাম, অমনি ইহারা সেই সুরের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ কথা বসাইয়া গান-বচনা করিতে লাগিয়া যাইতেন। একটি নূতন সুর তৈরি হইবামাত্র, সেটি আরও কয়েকবার বাজাইয়া ইহাদিগকে শুনাইতাম। সেই সময় অক্ষয়চন্দ্র চক্ষু মুদিয়া বর্মা সিগার টানিতে টানিতে, মনে মনে কথার চিন্তা করিতেন। পরে যখন তাহার নাক মুখ দিয়া অজস্রভাবে ধূমপ্রবাহ বহিত, তখনি বুঝা যাইত যে এইবার তাঁহার মস্তিষ্কের ইঞ্জিন চলিবার উপক্রম করিয়াছে। তিনি অমনি বাহজ্ঞানশূন্য হইয়া চুরুটের টুকরাটি, সম্মুখে যাহা পাইতেন এমন কি পিয়ানোর উপরেই, তাড়াতাড়ি রাখিয়া দিয়া হাঁফ ছাড়িয়া হয়েছে হয়েছে” বলিতে বলিতে আনন্দদীপ্ত মুখে লিখিতে শুরু করিয়া দিতেন। রবি কিন্তু বরাবর শান্তভাবেই ভাবাবেশে রচনা করিতেন। রবীন্দ্রনাথের চাঞ্চল্য কচিৎ লক্ষিত হইত। অক্ষয়ের যত শীঘ্র হইত, রবির রচনা তত শীঘ্র হইত না। সচরাচর গান বাঁধিয়া তাহাতে সুর-সংযোগ করাই প্রচলিত রীতি, কিন্তু আমাদের পদ্ধতি ছিল উল্টো। সুরের অনুরূপ গান তৈরি হইত।

 স্বর্ণকুমারীও অনেক সময় আমার রচিত সুরে গান প্রস্তুত করিতেন।