পাতা:গৃহশ্রী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৃহশ্ৰী S R Vo কিছুতেই ছাড়িবে না। পূর্বকালে ধনী বণিকরা বিবাহকালে খুব ঘটা করিতেন ; তঁহাদের আয়ও যথেষ্ট ছিল, এবং বাহা আড়ম্বর করিয়া, বাজী পোড়াইয়া, মিশিল বাহির করিয়া, চৌঘুড়ি চালাইয়া, সোনা রূপার খাটি বাহির করিয়া, রাস্তার লোকদিগকে তাক লগাইতে পারিলেই তাহার সৌভাগ্যের চূড়ান্ত সীমায় উঠিয়াছেন, এরূপ মনে করিতেন। বাড়ীর পাশ্বে অমুক বণিক তাহার পুত্র-কন্যার বিবাহে এত খরচ করিয়াছেন, আর আমি তদপেক্ষা বেশী করিতে পারিব না ? এরূপ প্ৰতিযোগিতা করিয়া এক রাত্রের ভিতর তাহার টাকা, মোহর কি ভাবে কত উড়াইয়া দিতে পারেন, --খোসামুদের সঙ্গে একত্র পরামর্শ করিয়া তাহারই তালিকা প্ৰস্তুত করিতেন। প্ৰাচীন বাঙ্গালা অনেক পুস্তকে-বণিকগণের বিবাহের কথা আছে-তাহ সমারোহ-জনক ব্যাপার ছিল । ইহার মধ্যে ভাল কথা এইটুকু যে, বণিকগণ কিছুতেই হিসাবটি একেবারে ভুলিতে পারিতেন না, এবং ব্যয়কে কখনই আয়ের মাথা ডিঙাইয়া যাইতে দিতেন না । ব্ৰাহ্মণ ভদ্রলোকের ঘরে বিবাহে নিৰ্ম্মল আমোদ ও আত্মীয়তার অভাব ছিল না ; কিন্তু তাহাতে কখনই বেশী খরচ হইত না । আজকাল মেয়েরা, বিবাহ উপলক্ষে, “এটা করিতে হইবে,-ওটা চাই-খোকার বিয়ে, যদি ইংরেজী বাজনা না আসে, যদি মিশিলটা ভাল না হয়, তবে আর কি হইল ?” এই সকল বলিয়া পুরুষদিগের কাছে বায়না ধরেন। তঁহাদের কথা শুনিয়া অনেক সময় দরিদ্র গৃহস্থের অন্তরাত্মা শুকাইয়া যায়। কিন্তু বাড়ীর প্রভাব বড় শক্ত। বিশেষ যখন স্নেহময়ী মা চক্ষের জল ফেলিয়া খোকার প্রতি মোহজনিত কৰ্ত্তব্যের উল্লেখ করেন, তখন পিতা আর কি করিবেন ? অনেক সময় তাহার ভাবী বৈবাহিক, নিজ ভিটা বন্ধক দিয়া এত কষ্ট যে টাকা সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন, তাহা বাজীর ধূমে উড়িয়া যায় ; ইংরেজী বাজনার উচ্চ রোলে ও মিশিলের চিত্ৰবিচিত্র চালার মধ্যে