পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পবিত্র হইয়া, ধর্মকেই রমণী গৃহের মধ্যে মূর্তিমান করিয়া রাখিবেন- এই তাঁহাদের ব্রত।’

 হরিমোহিনী কহিলেন, “অমনি আমাদের কৈলাসের কথাটা একটুখানি লিখে দিলে ভালো করতে বাবা।”

 গোরা কহিল, “না, আমি তাঁকে জানি নে। তাঁর কথা লিখতে পারব না।”

 হরিমোহিনী কাগজখানি যত্ন করিয়া মুড়িয়া, আঁচলে বাঁধিয়া, বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন। সুচরিতা তখনো আনন্দময়ীর নিকট ললিতার বাড়িতে ছিল। সেখানে আলোচনার সুবিধা হইবে না এবং ললিতা ও আনন্দময়ীর নিকট হইতে বিরুদ্ধ কথা শুনিয়া তাহার মনে দ্বিধা জন্মিতে পারে আশঙ্কা করিয়া সুচরিতাকে বলিয়া পাঠাইলেন, পরদিন মধ্যাহ্নে সে যেন তাঁহার নিকটে আসিয়া আহার করে। বিশেষ প্রয়োজনীয় কথা আছে আবার অপরাহ্ণেই সে চলিয়া যাইতে পারে।


 পরদিন মধ্যাহ্নে সুচরিতা মনকে কঠিন করিয়াই আসিল। সে জানিত তাহার মাসি তাহাকে এই বিবাহের কথাই আবার আর-কোনোরকম করিয়া বলিবেন। সে আজ তাঁহাকে অত্যন্ত শক্ত জবাব দিয়া কথাটা একেবারেই শেষ করিয়া দিবে, এই তাহার সংকল্প ছিল।

 সুচরিতার আহার শেষ হইলে হরিমোহিনী কহিলেন, “কাল সন্ধ্যার সময় আমি তোমার গুরুর ওখানে গিয়েছিলুম।”

 সুচরিতার অন্তঃকরণ কুণ্ঠিত হইয়া পড়িল। মাসি আবার কি তাহার কোনো কথা তুলিয়া তাঁহাকে অপমান করিয়া আসিয়াছেন।

 হরিমোহিনী কহিলেন, “ভয় নেই রাধারানী, আমি তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করতে যাই নি। একলা ছিলুম, ভাবলুম যাই তাঁর কাছে দুটো ভালো কথা শুনে আসি গে। কথায় কথায় তোমার কথাই উঠল। তা দেখলুম, তাঁরও ওই মত। মেয়েমানুষ যে বেশিদিন আইবুড়ো হয়ে থাকে, এটা তো তিনি ভালো বলেন না। তিনি বলেন, শাস্ত্রমতে ওটা অধর্ম। ওটা সাহেবদের

৩৭
৫৭৭