পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
চতুরঙ্গ

সেদিন নদীর চরে শচীশ দামিনীকে অমন একটা শক্ত ঘা দিয়া তার ফল হইল, দামিনীর সেই কাতর দৃষ্টি শচীশ মন হইতে সরাইতে পারিল না। তার পর কিছুদিন সে দামিনীর ’পরে একটু বিশেষ যত্ন দেখাইয়া অনুতাপের ব্রত যাপন করিতে লাগিল। অনেক দিন সে তো আমাদের সঙ্গে ভালো করিয়া কথাই কয় নাই, এখন সে দামিনীকে কাছে ডাকিয়া তার সঙ্গে আলাপ করিতে লাগিল। যে-সব তার অনেক ধ্যানের অনেক চিন্তার কথা সেই ছিল তার আলাপের বিষয়।

 দামিনী শচীশের ঔদাসীন্যকে ভয় করি না, কিন্তু এই যত্নকে তার বড়ো ভয়। সে জনিত এতটা সহিবে না, কেননা এর দাম বড় বেশি। একদিন হিসাবের দিকে যেই শচীশের নজর পড়িবে, দেখিবে খরচ বড় বেশি পড়িতেছে; সেইদিনই বিপদ। শচীশ অত্যন্ত ভালো ছেলের মতো বেশ নিয়মমত স্নানাহার করে, ইহাতে দামিনীর বুক দুরুদুরু করে, কেমন তার লজ্জা বোধ হয়। শচীশ অবাধ্য হইলে সে যেন বাঁচে। সে মনে মনে বলে, ‘সেদিন তুমি আমাকে দূর করিয়া দিয়াছিলে, ভালোই করিয়াছ। আমাকে যত্ন, এ যে তোমার আপনাকে শাস্তি দেওয়া। এ আমি সহিব কী করিয়া।’— দামিনী ভাবিল, ‘দূর হোক গে ছাই, এখানেও দেখিতেছি মেয়েদের সঙ্গে সই পাতাইয়া আবার আমাকে পাড়া ঘুরিতে হইবে।’

 একদিন রাত্রে হঠাৎ ডাক পড়িল, “বিশ্রী! দামিনী!”