ভাবিলেন, মিষ্টগন্ধে উড়ো ভ্রমরটা আপনি ফিরিয়া আসিয়া মধুকোষের উপর স্থির হইয়া বসিবে। হেমন্তের ছোটো ছোটো, দিনগুলো গানের মদে ফেনাইয়া যেন উপচিয়া পড়িল।
কিন্তু কই, দামিনী তত ধরা দেয় না। গুরুজি ইহা লক্ষ্য করিয়া একদিন হাসিয়া বলিলেন, “ভগবান শিকার করিতে বাহির হইয়াছেন, হরিণী পালাইয়া এই শিকারের রস আরো জমাইয়া তুলিতেছে; কিন্তু মরিতেই হইবে।”
প্রথমে দামিনীর সঙ্গে যখন আমাদের পরিচয় তখন সে ভক্তমণ্ডলীর মাঝে প্রত্যক্ষ ছিল না, কিন্তু সেটা আমরা খেয়াল করি নাই। এখন সে যে নাই সেইটেই আমাদের পক্ষে প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিল। তাকে না দেখিতে পাওয়াটাই ঝোড় হাওয়ার মতো আমাদিগকে এ-দিক ওদিক হইতে ঠেলা দিতে লাগিল। গুরুজি তার অনুপস্থিতিটাকে অহংকার বলিয়া ধরিয়া লইয়াছেন, সুতরাং সেটা তাঁর অহংকারে কেবলই ঘা দিতে থাকিত। আর আমি— আমার কথাটা বলিবার প্রয়োজন নাই।
একদিন গুরুজি সাহস করিয়া দামিনীকে যথাসম্ভব মৃদুমধুর সুরে বলিলেন, “দামিনী, আজ বিকালের দিকে তোমার কি সময় হইবে। তা হইলে—”
দামিনী কহিল, “না।”
“কেন বলো দেখি।”
“পাড়ায় নাড়ু কুটিতে যাইব।”
“নাডু কুটিতে? কেন।”
“নন্দীদের বাড়ি বিয়ে।”