পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জয়রাম-জয়ন্তী
১২১

 সিমসন স্মিথ অ্যাণ্ড কম্পানির অফিসে জয়রাম চল্লিশ বছর চাকরি করেছেন, শেষ বিশ বছর বড়বাবুর পদে ছিলেন। মনিবরা উদার, জয়রামকে মোটা পেনশন দেন। তিনি অবসর নিলে তাঁর ছেলে হরেরাম ওই পদ পান। চার বছর হল হরেরামও অবসর নিয়েছেন, এখন তিনি নবদ্বীপে বাস করছেন। তাঁর ছেলে, অর্থাৎ জয়রামের নাতি শিবরাম ওই ফার্মেই কাজ করে, তারও ভবিষ্যতে বড়বাবু হবার আশা আছে।

 জয়রাম তিনবার বিবাহ করেছিলেন, এখন তিনি বিপত্নীক। স্নান, কাপড় বদলানো, খাওয়া, মুখ ধোয়া ইত্যাদি নানা কাজে তাঁকে পরের সাহায্য নিতে হয়। রাত্রে অনেক বার তাঁর জন্যে প্রস্রাবের পাত্র এগিয়ে দিতে হয়, সকালে এনিমাও দিতে হয়। একজন দক্ষ চাকর এইসব কাজ করত, কিন্তু জয়রামের গালাগালি সইতে না পেরে সে চলে গেছে। অগত্যা সম্প্রতি একজন নর্স বাহাল করা হয়েছে, লতিকা খাস্তগির। পাস করা নর্ন নয়, সেজন্যে তার চার্জ কম। সে সন্ধ্যায় আসে, বেলা আটটায় চলে যায়। তার সেবায় জয়রাম এখন পর্যন্ত তুষ্ট আছেন।

 আগন্তুক আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে জয়রাম প্রসন্ন মনে গল্প করছেন আর মাঝে মাঝে গড়গড়ার নির্ধূম নল টানছেন, এ সময় তাঁর নাতি শিবরাম এসে বলল, দাদু মস্ত খবর, আমাদের বড়সায়েব মিস্টার সিমসন তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন।

 জয়রাম বললেন, বলিস কি রে, সার চার্লস সিমসন?

 —আঃ, তোমার কিছুই মনে থাকে না। সার চার্লস তো তোমার চাইতেও বড় ছিলেন, সেই কবে মান্ধাতার আমলে মারা গেছেন। তাঁর নাতি হ্যারি সিমসন এখন সিনিয়র পার্টনার, তিনিই গুড উইশ জানাতে আসছেন। তোমার সঙ্গে ফার্মের কত কালের সম্পর্ক তা জানেন কিনা।