পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
চমৎকুমারী ইত্যাদি

 —আমার এখানে দেখে থাকবেন, এখন ভুলে গেছেন। তেরো-চোদ্দ বছর আগে প্রায়ই এখানে আসত, অতি অদ্ভুত লোক।

 —ফিরিঙ্গী নাকি?

 —না, খাঁটী বাঙালী। গুপী সায়েবের আসল নাম বোধ হয় গোপীবল্লভ ঘোষ, গোপীনাথ গোপেশ্বর কিংবা গোপেন্দ্রও হতে পারে, ঠিক জানি না। একটা বিস্কুটের কারখানায় কাজ করত। এখনকার ছোকরারা যেমন প্যাণ্ট-শার্ট প’রে গলায় লম্বা টাই উড়িয়ে খালি মাথায় রোদে ঘুরে বেড়ায়, স্বাধীনতার আগের যুগে তেমন ফ্যাশন ছিল না। রামানন্দ চাটুজ্যে মশাই একবার লিখেছিলেন, রোদে বেরুতে হলে মাথায় হ্যাট দেওয়া ভাল, দেশী সাজের সঙ্গেও তা চলতে পারে। গুপী এই উপদেশটি শিরোধার্য করেছিল, ধুতি পঞ্জাবি প’রে মাথায় শোলা হ্যাট দিয়ে বাইসিকল চড়ে ঘুরে বেড়াত। একবার অর্ধোদয় যোগের সময় তাকে দেখেছিলুম, একটা গামছা প’রে আর একটা গামছা গায়ে জড়িয়ে মাথায় হ্যাট দিয়ে হাতে কমণ্ডলু ঝুলিয়ে গঙ্গাস্নানে যাচ্ছে। এই হ্যাটের জন্যেই সবাই তাকে গুপী সায়েব বলত।

 নয়নচাঁদ বললেন, তোমার ভণিতা রেখে দাও, পকেট-মারা কিসে বন্ধ হল তাই চটপট বলে ফেল। আমাদের এখন অনেক কাজ আছে। একটা বিয়ের যোগাড় কি সোজা কথা!

 একটু চটে গিয়ে আমি বললুম, গুপী সায়েব হেঁজিপেঁজি লোক নয়, তার ইতিহাস বলতে সময় লাগে, আর ধীরে-সুস্থে তা শুনতে হয়। আপনাদের যখন ফুরসত নেই তখন থাক।

 নয়নচাঁদ বললেন, আরে না না, রাগ কর কেন। কি জান, মনটা একটু খিঁচড়ে আছে, তাই ব্যস্ত হয়েছিলাম। হাঁ ভাল কথা, শুনলুম হৃদয় দাস নাকি একটা ভাল রোভার গাড়ির জন্যে বায়না করেছে। তা হলে কঞ্জুস বুড়োর সুব্বুদ্ধি হয়েছে?