পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
চমৎকুমারী ইত্যাদি

 জয়গোপাল বললেন, তর্ক করলে শ্রীকৃষ্ণ বহু দূরে সরে যান, বিশ্বাসেই তাঁকে পাওয়া যায়। তিনি কৃপাসিন্ধু মঙ্গলময়। আমরা জ্ঞানহীন ক্ষুদ্র প্রাণী, তাঁর উদ্দেশ্য বোঝা আমাদের অসাধ্য। শুধু এইটটুকুই জানি, তিনি যা করেন তা জগতের মঙ্গলের জন্যেই করেন। কান্তকবি তাই গেয়েছেন—জানি তুমি মঙ্গলময়, সুখে রাখ দুঃখে রাখ যাহা ভাল হয়।

 অট্টহাস্য করে জীবনকৃষ্ণ বললেন, বাহবা, চমৎকার যুক্তি। একেই বলে বেগিং দি কোয়েশ্চন। কোনও প্রমাণ নেই অথচ গোড়াতেই মেনে নিয়েছ যে ভগবান আছেন এবং তিনি পরম দয়ালু। যদি সুখ পাও তবে বলবে, এই দেখ ভগবানের কত দয়া। যদি দুঃখ পাও তবে কুযুক্তি দিয়ে তা ঢাকবার চেষ্টা করবে। হিন্দু বলবে কর্মফল, খীষ্টান বলবে ফ্রী উইল আর অরিজিনাল সিন। কুকুর বেরাল ছাগল বাচ্চাকে দুধ দিচ্ছে দেখলে বলবে, আহা ভগবানের কত দয়া, সন্তানের জন্যে মাতৃবৃক্ষে অমৃতরসের ভাণ্ড সৃষ্টি করছেন। কিন্তু দীনেশের মতন সাধুলোক যখন শোক পায় আর সর্বস্বান্ত হয়, হাজার হাজার মানুষ যখন দুর্ভিক্ষে মহামারীতে বা যুদ্ধে মরে, তখন তো মুখ ফুটে বলতে পার না—উঃ ভগবান কি নিষ্ঠুর! তোমরা ভক্তরা হচ্ছ খোশামুদে একচোখো, যুক্তির বালাই নেই, শুধু অন্ধ বিশ্বাস। আচ্ছা জয়গোপাল, কবি ঈশ্বর গুপ্ত তোমার মাতৃকুলের একজন পূর্ব পুরুষ ছিলেন না? তিনি ভগবানকে অনেকটা চিনতে পেরেছিলেন, তাই লিখেছেন—

হায় হায় কব কায় কি হইল জ্বালা,
জগতের পিতা হয়ে তুমি হলে কালা।…
কহিতে না পার কথা, কি রাখিব নাম,
তুমি হে আমার বাবা হাবা আত্মারাম।