পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা سالا : প্রাত্যহিক, তাহা চিরন্তন ; তাহার পরে দলীয় কৰ্ত্তব্য, তাহা বিশেষ আবশ্যক সাধনের জন্য ক্ষণকালীন-তাহা অনেকটা পরিমাণে যন্ত্রমাত্র, তাহাতে নিজের ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তির সর্বতোভাবে সম্পূৰ্ণ চৰ্চা হয় না। তাহ। ধৰ্ম্মসাধন অপেক্ষা প্ৰয়োজনসাধনের পক্ষে অধিক উপযোগী । কিন্তু কালের এবং ভাবের পরিবর্তন হইতেছে। চারিদিকেই দল বাধিয়া উঠিতেছে-কিছুই নিভৃত এবং কেহই গোপন থাকিতেছে না । নিজের কীৰ্ত্তির মধ্যেই নিজেকে কৃতাৰ্থ করা, নিজের মঙ্গলচেষ্টার মধ্যেই নিজেকে পুরস্কৃত করা, এখন আর টেকে না। শুভকৰ্ম্ম এখন আর সহজ এবং আত্মবিস্মৃত নহে, এখন তাহ সর্বদাই উত্তেজনার অপেক্ষা রাখে। যে সকল ভাল কাজ ধ্বনিত হইয়া উঠে না, আমাদের কাছে তাহার মূল্য প্রতিদিন কমিয়া আসিতেছে, এইজন্য ক্রমশ আমাদের গৃহ পরিত্যক্ত, আমাদের জনপদ নিঃসহায়, আমাদের জন্মগ্রাম রোগজীর্ণ, আমাদের পল্লীর সরোবর সকল পঙ্কদূষিত, আমাদের সমস্ত চেষ্টাই কেবল সভাসমিতি এবং সংবাদপত্ৰহাটের মধ্যে। ভ্ৰাতৃভাব এখন ভ্রাতাকে ছাড়িয়া বাহিরে ফিরিতেছে, দয়া এখন দীনকে ছাড়িয়া সংবাদদাতার স্তম্ভের উপর চড়িয়া দাড়াইতেছে এবং লোকহিতৈষিতা এখন লোককে ছাড়িয়া রাজদ্বারে খেতাব খুজিয়া বেড়াইতেছে। ম্যাজিষ্ট্রেটের তাড়া না। খাইলে এখন আমাদের গ্রামে স্কুল হয় না, রোগী ঔষধ পায় না, দেশের জলকষ্ট দূর হয় না। এখন ধ্বনি, ধন্যবাদ এবং করতালির নেশা যখন ক্ৰমে চড়িয়া উঠিয়াছে, তখন সেই প্রলোভনের ব্যবস্থা রাখিতে হয়। ঠিক যেন বাছুরটাকে কশাইখানায় বিক্রয় করিয়া ফুকাদেওয়া দুধের ব্যবসায় চালাইতে হইতেছে। । অতএব আমরা যে দল বাধিৰ্ম্ম শোক, দল বাধিয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য পরস্পরকে প্ৰাণপণে উৎসাহিত করিতেছি, এখন তাহার সময় আসিয়াছে। কিন্তু পরিবর্তনের সন্ধিকালে ঠিক নিয়মমত কিছুই হয় না।