বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবুর করতে হতনা। আজ আর চিঠি লেখবার সময় পাই নে— সময় আমার একেবারে চুরমার হয়ে গেছে। কি করে হল বলি। মানুষের বদনাম হলেই শাস্তি পায়, কিন্তু আমার হল তার উল্টো। হঠাৎ বিলেতে আমার সুনাম বেরল । বোধ হয় খবরের কাগজে পড়েছ আজকাল এমন সব বড় বড় কামান বেরিয়েচে যার গোলা অনেক দূর পর্যন্ত যায়। সমুদ্রপার থেকে সেই রকম সব গোলা আমার সময়ের উপর এসে পড়চে । এই গোলাগুলি আসে চিঠির বেশ ধরে— কত যে তার ঠিকানা নেই। তাই আমার অবকাশ টুকরো টুকরো হয়ে গেল। তোমার বয়স আমার যখন ছিল তখন নিজের ইচ্ছেয় চিঠি লিখতুম, এখন অন্যের ইচ্ছেয় এত বেশি লিখতে হয় যে, নিজের ইচ্ছেটা মারাই গেল। তার পরে আবার ভয়ানক কুঁড়ে হয়ে গেছি। যত বেশি কাজ করতে হচ্চে ততই কুঁড়েমি আরো বেড়ে যাচ্চে। তুমি যদি আমাদের কাছাকাছি কোথাও থাকতে তাহলে গাড়িভাড়া করে ছুটে গিয়ে মোকাবিলায় তোমাকে জবাব দিয়ে আসতুম তবু কলম ধরতুম না। যখন আমার বয়স সাত, তখন থেকে কেবলি কলম চালিয়ে আসচি এখন ষাট বছরে পড়বার উদ্যোগ করচি, এখনও সেই কলম চলচে। এই জন্যে ঐ কলমটার উপরে আমার অত্যন্ত বিরক্ত ধরে গেছে। এখন লিখে যাওয়ার চেয়ে বকে যাওয়া ঢের বেশি সহজ মনে হয়। যদি তেমন সুবিধে হত ত দেখিয়ে দিতুম বকুনিতে তুমি কখনো আমার সঙ্গে পেরে উঠতে না। সেটা তোমার ভাল লাগত কিনা বলতে পারি নে। কেননা তোমার যতগুলি পুতুল আছে তারা কেউ তোমার কথার জবাব করেনা, তুমি যা বল তাই তারা চুপ করে শুনে যায়— আমার দ্বারা কিন্তু সেটা হবার জো নেই— অন্যের কথা শোনার চেয়ে অন্যকে কথা শোনানো আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। আমার বড় মেয়ে যখন ছোট ছিল তখন বকুনিতে তার সঙ্গে পারতুম না কিন্তু এখন সে বড় হয়ে শ্বশুর বাড়িতে চলে গেছে তার পর থেকে আমার সমকক্ষ কাউকে পাইনি। তোমাকে পরীক্ষা করে দেখতে SS