বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হবে তবে রাত্রে অন্ধকার হয় কেন, অন্ধকারে আমাদের দর্শন মননশক্তির হ্রাস হয় কেন, উক্ত শক্তির হ্রাস হলে কেনই বা আমাদের দেহ তল্লালস হয়ে আসে? গভীর অভিজ্ঞতাপ্রসূত এই সকল অকাট্য যুক্তির কোন উত্তর দেওয়া যায় না— কাজেই পরাস্ত হয়ে ঘুমোতে হয়। তারা সব শাস্ত্র ও তার সব ভাষ্য ঘেঁটে বলেচেন, যে, রাত্রে ঘুম না হওয়াকেই বলে অনিদ্ৰা— ঘুম হলেই অনিদ্রা বলে জগতে কোন পদার্থ থাকৃতই না। এত বড় কথার সমস্ত তাৎপৰ্য্য বুঝতেই পারি না— আমাদের ত দিব্য দৃষ্টি নেই, আমরা যথোচিত পরিমাণে ধ্যানধারণা নিদিধ্যাসন করি নি— সেইজন্যে সংশয়কসুষিত চিত্তে আমরা তর্ক করে থাকি, যে, রাত্রে কয়েক ঘন্টা না . ঘুমোলেই সেটাকে অনিদ্রা বলে’ নিন্দা করে, অথচ দিনে অন্তত বারো ঘন্টাই যে কেউ ঘুমেই নে সেটাকে ডাক্তারীশাস্ত্রে বা কোনো শাস্ত্রেই ত অনিদ্রা বলে না। শুনে প্রবীণ লোকেরা আমাদের অৰ্ব্বাচীন বলে হাস্য করেন, বলেন আজকালকার ছেলেরা দুচার পাতা ইংরেজি পড়ে তর্ক করতে আসে, জানে না যে, “বিশ্বাসে মিলায় নিদ্রা তর্কে বহু দূর"। কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না— কারণ, বার বার পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, তর্ক যতই করতে থাকি নিদ্রা ততই চড়ে যায় ; কিনা তর্কে তার হাতে আত্মসমপর্ণ করাই শ্রেয়। অতএব, আজকের মত চিঠি বন্ধ করে শুতে যাই। যদি সম্ভবপর হয় তা হলে কাল সকালে চিঠি লিখব। কিন্তু চিঠি যে লিখতেই হবে তার কি কোনো অনিবাৰ্য্য কারণ আছে? কারণ না থাকলে যখন কাৰ্য্য হয় না তখন অবশ্যই আছে। শুনে হঠাৎ মনে হয় কারণটা আছে আমার বাইরে— দূরে কোনো একটি বালিকার মধ্যে, আমার চিঠি না পেলে তার দুঃখ হবে সেই দুঃখের মধ্যে। কিন্তু ভেবে দেখতে গেলে দেখা যায় কারণটা আমারই অহঙ্কারের মধ্যে। আমি চিঠি না লিখলে বালিকা দুঃখ পাবে এটা কল্পনা করার মধ্যে অহঙ্কার আছে বই কি। সেই অহঙ্কারে আমাকে খামকা চিঠি লিখতে প্রবৃত্ত করেচে এই ঘনাদ্ধকারা যামিনীতে, এই ঝিল্লিমুখরিতা, २8d