পাতা:চিঠিপত্র (একাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার হালের লেখার মধ্যে তার প্রভাব প্রবেশ করেছে বলে সন্দেহ হয়, সেই প্রভাবটা যদি ভিতরকার জিনিষ হয় তাহলেই সেটা অকৃত্রিম হতে পারে। তুমি জানো আমি যখন জন্মগ্রহণ করেছিলুম তখন আমাদের পরিবার ছিল এদেশের সমাজ থেকে নির্বাসিত— আমরা ছিলুম দ্বীপে রবিনসন ক্রুসোর মতো, হাতের কাছে তৈরি জিনিষ কিছুই পাই নি, সব আপনারা তৈরি করে নিয়েছি— সেই নিজের তৈরি আত্মরচনার মধ্যে বেড়ে উঠেছি সুদীর্ঘকাল ধরে। মনে আছে ছেলেবেল প্রায় শুনতুম পিরিলি বাড়ির ভাবভঙ্গী ভাষা বেশভূষা আচার ব্যবহার নিয়ে পরিহাস, তারা ভাবতে পারত না এই জিনিষটাই অকৃত্রিম, আমাদের স্বভাবের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে, বাইরে থেকে সাজানো নয়। আমাদের মধ্যে এই যে অভিব্যক্তির স্বাধীনতা ঘটেছে এটা কাজ করেছে আমার জীবনের সকল বিভাগেই। এমন কি যে ধর্মশিক্ষার মধ্যে জীবন আরম্ভ করেছি সেই ধর্মকেও যতক্ষণ না আপন স্বভাবের সঙ্গে সঙ্গতি দিয়ে রূপান্তরিত করতে পারলুম ততক্ষণ তাকে গ্রহণ করতে পারিনি। প্রথম বয়সে কাব্য আরম্ভ করেছিলুম অনুকরণে, বিহারীলালকে, অক্ষয় চৌধুরীকে রেখেছিলুম সামনে, কিন্তু অল্পবয়সেই একদিন কখন বেড়া ভেঙে বেরিয়ে পড়লুম ; তেতলার ঘরে দুপুর বেলায় সেই হঠাৎ মুক্তির প্রবল আনন্দের কথা আজও মনে পড়ে— অথচ যে কবিতাটা সেদিন আমার নবীন লেখনীকে কুলত্যাগিনী করেছিল তার কাচা ছেলেমানুষি আজকের দিনে কোনো শ্রেণীর কবির পক্ষেই গৌরবের ২ ৩৩