পাতা:চিঠিপত্র (ত্রয়োদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকই আমাকে ডেকে আসন দেয়, আমার কথা মন দিয়ে শোনে, যখন ভারতবর্ষীয়দের মুখোস পরে দাড়াই তখন বাধা বিস্তর। যখন এরা মাহবরূপে দেখে তখনি এরা আমাকে ভারতবর্ষীয়রূপেই শ্রদ্ধা করে, যখন নিছক ভারতবর্ষীয়রূপে দেখা দিতে চাই তখন এরা আমাকে মাহুষরূপে সমাদর করতে পারে না । আমার স্বধৰ্ম পালন করতে গিয়ে আমার চলার পথ ভুল বোঝার দ্বারা বন্ধুর হয়ে ওঠে।" এশিয়ার দূরপ্রাস্তবতী বিচিত্র জনসমাজের সঙ্গে যোগ, তাদের আত্মীয়তা ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতি রবীন্দ্রনাথকে বিস্মিত করেছিল । নিজের জন্মভূমিতে মুদীর্ঘকাল তার স্বদেশবাসী একাংশের অস্বীকৃতি, বিরুদ্ধতা, এমন-কি অহেতুক বৈরিতার তুলনায় এই প্রীতি, নিঃসন্দেহে তার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল । পৃথিবীর সকল দেশই যে তার দেশ, সকল মাতুষই তার স্ব-জন, স্বভাবগত তার এই প্র ও্যয় দেশাস্তরের অভিজ্ঞতায় দৃঢ়তর হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে লেখা চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ এই প্রসঙ্গ বার বার আলোচনা করেছেন, এ-রকম তিনখানি চিঠির প্রাসঙ্গিক অংশ উদ্ভূত হল। আর্জেন্টিনার বুয়োনেস এয়ারিস থেকে ১৯২৪ খৃস্টাদের ২২ নভেম্বর প্রশাস্তচন্দ্র মহলানবিশকে লিখছেন—

  • এখানকার সকলে যে কত গভীর আত্মীয়তার সঙ্গে আমাকে ভালবাসে তা দেখলে আশ্চৰ্য্য হতে হয় । এখানেই আমার বাসা বাধা উচিত ছিল, কেননা এরা সত্যই আমাকে চায় এবং আমার কাছ থেকে কিছু সত্য চায়।. জন্মভূমিতে আমাদের আত্মীয়ের কাছ থেকে আমরা সহজেই ভালোবাসা এবং সাহচৰ্য্য চাই,— কিন্তু আমাদের মানস-আমি, সেও কি মানুষের কাছ থেকে দরদ চায় না, সেও কি মানুষের কাছ থেকে পুরো মূল্য না পেলে নিজেকে দরিত্র জ্ঞান করে দুঃখ পায় না ? সেই আমার মানস-আমি, আমার জন্মভূমিতে অধিকাংশ কালই

\》()