পাতা:চিঠিপত্র (পঞ্চম খণ্ড ১৯৪৫)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিঠিপত্র sse ভরসা করি এ চিঠিট যখন তোমার হাতে গিয়ে পৌঁছবে তখন চুয়োডাঙ্গার আকাশ অন্ধকার করে মেঘ করেছে এবং সমস্ত প্রাস্তর ব্যাপ্ত করে ঝুপ কুপ, শব্দে বৃষ্টি হচ্চে। নইলে রোদরে যদি চারদিক ধুধু করতে থাকে, ঘাসগুলি যদি সমস্ত শুকিয়ে হলদে হয়ে এসে থাকে, এবং আকাশের কোন প্রান্তভাগে যদি মেঘের আশ্বাসমাত্র না থাকে, তাহলে এই বর্ষাজীবী চিঠিটা নিতান্ত অকালমৃত্যুর হাতে গিয়ে পড়বে। বর্ষাকালটা কিনা প্রকৃতির সাধারণ অবস্থার একটা ব্যতিক্রমদশা । সূৰ্য্যনক্ষত্র প্রভৃতি প্রকৃতির সর্বাপেক্ষ নিত্যলক্ষণগুলি বিলুপ্ত, তার স্থানে ক্ষণিক মেঘের ক্ষণিক রাজত্ব,— প্রকৃতির দৈনন্দিন জগতের বিচিত্র জীবনকলরব মেীন— তারি স্থানে অবিশ্রাম একতান বৃষ্টির ঝরঝর শব্দ– সবসুদ্ধ এই রকম ক্ষণস্থায়ী একটা বিপৰ্য্যয় ভাব । সুতরাং প্রকৃতি প্রকৃতিস্থ হবামাত্রই একটু রোদ উঠলেই বর্ষার কথা সমস্ত ভুলে যেতে হয়। বর্ষার সম্পূর্ণ ভাবটি আর মনের মধ্যে আনা যায় না— তাই আশঙ্কা হচ্চে পাছে চিঠিটা জ্যৈষ্ঠমাসের মধ্যাহ্নতাপের সময় তোমার হাতে গিয়ে পৌছয় । চিঠির একটা মস্ত অভাব হচ্চে ঐ– বৃষ্টির চিঠি রৌদ্রের সময় গিয়ে পৌঁছয়, সন্ধের চিঠি সকালে উপস্থিত হয়- উভয়পক্ষের মধ্যে পরিপূর্ণ সমবেদন থাকে না । ঘনীভূত অন্ধকার সায়াহ্নে বাতি জেলে একূল৷ বসে ষে চিঠিটা লেখা হয় সেটা যদি তুমি প্রাতঃকালে মুখপ্রক্ষালনপূর্বক সপরিবারে চা-রুটি সেবন করতে করতে পাঠ কর তাহলে কি রকম পাপানুষ্ঠান হয় ভেবে দেখ দেখি—