পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
ছিন্নমুকুল

প্রায় কিছুই থাইলেন না,—যদিও কিছু পূর্ব্বে তিনি ক্ষুধা তৃষ্ণায় যামিনীর মতনই অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছিলেন। ঘোর বিস্ময়ে পড়িয়া তাঁহার হৃদয় এত প্রকার ভাবে পূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল যে তখন ক্ষুধাতৃষ্ণা সকলই বিস্মৃত হইয়াছিলেন।

 পরিবেশন শেষ করিয়া বনবালা তাঁহাদের নিকট বসিয়া নিতান্ত সরলভাবে কত গল্প করিতে লাগিল। তাঁহারা শুনিলেন, বালিকার নাম নীরজা, তাঁহার পিতা নৈমিষারণ্যে মানৎরক্ষা করিতে গিয়াছেন, রাত্রেই আসিবার কথা আছে। বালিকা কিছু পরে বলিল “বাবা যতক্ষণ না আসেন আমি ঘুমাব না। কিন্তু এখন আমি আমার কুটীরে যাই, আপনারা শ্রান্ত হয়েছেন এবার বিশ্রাম করুন।”

 বলিয়া বালিকা বিদায় গ্রহণ পূর্ব্বক মন্দির হইতে কিছুদূরে প্রাঙ্গণস্থ স্বতন্ত্র কুটীরে গমন করিল। বলা বাহুল্য, নিদ্রার নাম গন্ধও এখন তাঁহাদের ছিলনা, কিন্তু রমণীর কথায় অগত্যা তাঁহারা দালানে নির্দ্দিষ্ট খাটিয়ার আশ্রয় লইলেন।

 যামিনী শীঘ্রই নিদ্রামগ্ন হইলেন, কিন্তু প্রমোদের মন অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত চিন্তাতরঙ্গে আন্দোলিত হইতে লাগিল। তিনি ভাবিতে লাগিলেন “এমন বিজনে এ রমণী কে? উদ্যানের কুসুম বনে কেমন করিয়া ফুটিল? পৃথিবীর দুর্লভ রত্ন এই কুটিরে কেন? এইরূপ চিন্তাতে অনেক রাত্রি অতিবাহিত করিয়া রাত্রিশেষে তিনি নিদ্রিত হইয়া পড়িলেন। যামিনীনাথ প্রত্যূষে কখন শয্যা ত্যাগ করিয়া গেলেন তিনি তাহা জানিতেও পারিলেন না।

 এদিকে সমস্ত রাত্রি অতিবাহিত হইল, তথাপি নীরজার পিতা তীর্থ হইতে ফিরিলেন না। নীরজা কখনও শুইয়া, কখনও বসিয়া, কখনও উত্থানে গাহিতে গাহিতে বেড়াইয়া রাত্রি কাটাইল। প্রত্যূষে মধুময় সঙ্গীধ্বনিতে যামিনীর নিদ্রাভঙ্গ হইল। তিনি বাহিরে আসিয়া