পাতা বোজেন নাই, যতক্ষণ ঝড় বৃষ্টি হইতেছিল বারাণ্ডায় বসিয়া সেই অন্ধকার ঝটিকাময় নিশার সহিত আপনার অদৃষ্টের তুলনা করিতেছিলেন। মধ্যরাত্রে কেবল একবার তাঁহার সে চিন্তা ভঙ্গ হইয়াছিল। রামধন কতকগুলি পুলিসের লোক সঙ্গে কয়েক জন দস্যুকে ধৃত করিয়া তাঁহার নিকট আসিয়াছিল। আবার তাহারা আসিতে পারে এই ভাবিয়া সদর দ্বার খোলা রাখিয়াই তিনি উপরে গিয়া চৌকিতে বসিয়াছেন মাত্র এই সময় সহসা কনককে এই অবস্থায় দেখিয়া তিনিও আশ্চর্য্য হইলেন। কনক মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িল, তিনিও অজ্ঞানবৎ তখনি তাহাকে ক্রোড়ে করিয়া পালঙ্গে আনিয়া শয়ন করাইলেন এবং তাহার শয্যার পার্শ্বে বসিয়া শুশ্রূষা করিতে লাগিলেন। ক্রমে কনকের মোহ ভাঙ্গিল, হিরণকে দেখিয়া মৃদু মৃদু হাসিয়া বলিল,
“তুমি কে? দেবতা? আমি যে তোমাকে ধ্যানে দেখেছি। আমি কি গান গাচ্ছিলুম, মনে করে দেও তো, আমি গাই।”
হিরণ দেখিলেন, কনক উন্মাদিনী। তাহার কথা শুনিয়া তাহার সেই মোহময় আলুথালু বেশ দেখিয়া হিরণের বুক ফাটিয়া যাইতে লাগিল।
বলিলেন, “কনক আমার, আমি যে তোমার হিরণকুমার, আমাকে চিনতে পারছ না?”
উন্মাদিনী বলিল, “হিরণকুমার! কৈ তোমার মুখ আমাকে ভাল করে দেখাও দেখি। কনক শয্যা হইতে উঠিয়া বসিল, হিরণকুমারের মুখের দিকে অনেকক্ষণ চাহিয়া চাহিয়া তাহার হাত খানি স্বহস্তে লইয়া দেখিয়া দেখিয়া বলিল, “ঠিক বলেছ, তুমিই হিরণকুমার; হিরণ, একটি গান কর না। আমি গাব? তুমি শুনবে?” বালিকা গাহিল,
“আঁধার নিশীথে একা আমি অভাগিনী—
না, একি! তুমি দেবতা! কৈ আমার হিরণ কোথায় গেলেন? হিরণ—হিরণ—চিরবিচ্ছেদ—চিরবিচ্ছেদ—কি?”