পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
ছিন্নমুকুল

বলিতে পারিলাম না। কিছু পরে কনক বিরক্তভাবে বইখানি মুড়িয়া অঞ্চলে অশ্রু মুছিতে লাগিল, মুছিয়া মুছিয়া আবার কি ভাবে জানি না, বইখানি খুলিয়া পড়িতে গেল, এই সময় প্রমোদ ঘরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। আস্তে আস্তে তাহার নিকট আসিয়া একখানি চৌকিতে স্থিরভাবে বসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন “কি পড়ছিলে?

 “ভারতবর্ষের ইতিহাস।”

 “কই দেখি” বলিয়া প্রমোদ বইখানি হাতে লইলেন, কিন্তু তাহাতে একবার চক্ষু বুলাইয়াই আবার সশব্দে টেবিলের উপর ফেলিয়া রাখিয়া বলিলেন “কনক!—"

 কনক বলিয়াই প্রমোদ থামিলেন, কি বলিতে গিয়াছিলেন আর বলিলেন না, কনক তাহা বুঝিয়া বলিল “দাদা, কি? কি বলছিলে বল না?”

 “না, কিছু না—জিজ্ঞাসা করছিলুম তোর ইতিহাস বেশ মনে আছে? বল দেখি নূরজাহান কে?”

 “সের আফগানের স্ত্রী, পরে জাহাঙ্গীরের রাণী হয়।”

 “জাহাঙ্গীর নূরজাহানকে চিন্‌লে কি করে?”

 "অল্পবয়স্কা নূবজাহান আকবরের অন্দরে প্রায়ই থাকত, সেই সময় যুবরাজ জাহাঙ্গীর তাহাকে দেখে রূপে মুগ্ধ হন।”

 "আচ্ছা, আচ্ছা, তার পর সের আফগানের সঙ্গে বিবাহের পর আবার জাহাঙ্গীরের রাণী হ’ল কি করে?”

 “জাহাঙ্গীরের আদেশে সের আফগান নিহত”

 কনকের কথাটি শেষ না হইতে হইতেই প্রমোদ বলিলেন—

 “ছিঃ ছিঃ, জাহাঙ্গীরের প্রেম প্রেমই নয়, সে প্রেমে আত্মবিসর্জ্জন কই?” বলিতে বলিতে প্রমোদের মনে কত ভাব বহিয়া গেল। মনে হইল নীরজা যে তাঁহার হইবে, ইহা তো তাঁহার দুরাশা।